West Bengal Panchayat Election 2023

অভি-যাত্রার অভিমুখ ‘পরিচ্ছন্ন পঞ্চায়েত’ই

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে ভোটের প্রচারে নতুন মাত্রা এনেছিল তৃণমূল। তাতে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ধাক্কা সামলে সাফল্য পেয়েছিল শাসক দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩১
Share:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দু’মাসের জনসংযোগ যাত্রার কথা আগেই জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই রূপরেখা স্পষ্ট করে বৃহস্পতিবার অভিষেক জানালেন, তাঁর এই কর্মসূচির লক্ষ্য ‘নতুন তৃণমূল’ ও ‘পরিচ্ছন্ন পঞ্চায়েত’। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’।

Advertisement

মমতার বুধবারের ঘোষণার পরেই এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতই প্রশাসনের শিরদাঁড়া। পরিষ্কার পঞ্চায়েত গঠনের মধ্যে দিয়েই নতুন তৃণমূল আত্মপ্রকাশ করবে।’’ ২৫ এপ্রিল কোচবিহারের দিনহাটা থেকে এই কর্মসূচি শুরু করবেন তিনি।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে ভোটের প্রচারে নতুন মাত্রা এনেছিল তৃণমূল। তাতে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ধাক্কা সামলে সাফল্য পেয়েছিল শাসক দল। কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে সাজা রাজ্যব্যাপী এই কর্মসূচিতে এ বার সামনে থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত ঘুরে এই কর্মসূচিতে জনসংযোগের নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে চাইছেন তিনি। ২৪ এপ্রিল কোচবিহারের দিনহাটায় ‘যাত্রা’ শুরু করে ২৪ জুন অভিষেক থামবেন সাগরে। এই যাত্রাপথে সাধারণ মানুষের মত জেনে পঞ্চায়েতে দলের প্রার্থী বাছাই করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

দুর্নীতি আর স্বজনপোষণের অভিযোগ ঘিরে যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা দানা বেঁধেছে, তার আঁচ পৌঁছেছে শাসকের উপরতলায়ও। আর গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের গাজোয়ারির পরে তা এখন গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো। এই অবস্থায় নতুন করে মানুষের আস্থা ফিরে পেতে অভিষেক বলেন, ‘‘স্থানীয় মানুষই ঠিক করবেন, পঞ্চায়েতে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করবেন কে। কী তাঁদের প্রয়োজন। দল সেই ভাবেই প্রার্থী বাছাই করবে।’’ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে দু’-দুটি পূর্ণ মেয়াদের পঞ্চায়েতের দুর্নীতির দায় কি মেনেই এই যাত্রায় নামছেন? অভিষেকের জবাব, ‘‘কোনও দলই ধোয়া তুলসীপাতা নয়। আমরাও নই। তবে পরিষ্কার পঞ্চায়েত গড়তে পারলে আগামী ৫০ বছর বাংলার ধারেকাছে কেউ আসতে পারবে না।’’

ভোটের মুখে অভিষেকের এই কর্মসূচিকে কটাক্ষই করেছে বিজেপি ও সিপিএম। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘এ সব করে কোনও লাভ হবে না! যাত্রার জন্য লাক্সারি বাস এসেছে শুনেছি। যে ভাবে নানা জায়গায় লোকে তৃণমূল নেতাদের দেখে ‘চোর, চোর’ বলছে, বড়দের দেখে আরও বেশি করে না বলে!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘গাড়িতে বা হেলিকপ্টারে উনি ঘুরতে পারেন। তাকে সংযোগ যাত্রা বলে না, দাপট যাত্রা হতে পারে। পায়ে পায়ে দু’মাস হাঁটার যোগ্যতা ওঁর হবে না।’’

অভিষেক এ দিন অবশ্য বলেন, ‘‘কে কী বলছেন, জানি না। তৃণমূল ক্ষমতায় আছে। তাই আমরা আগামী ২৬ সাল পর্যন্ত নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারতাম। কিন্তু মানুষের কাছে না গেলে সমস্যার কথা জানতে পারব না। সমাধান কী, তা-ও বুঝতে পারব না।’’ এই কর্মসূচিতে জেলায় ঘুরে এক-এক দিন তিন-চারটি সভা করবেন অভিষেক। তার পরে বিকেল ও সন্ধ্যায় সাংগঠনিক ও সামাজিক বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।

শাসক দল দু’মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করায় পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘তৃণমূল ভোট করতে চাইছে না। এখন মনে হচ্ছে, জুলাইয়ে ভোট হবে। তা না-হলে আরও পিছিয়ে যাবে। ভোট ছ’মাস এগিয়ে বা পিছিয়ে আনার সুযোগ তো আছেই। সেই ক্ষমতা সরকার কাজে লাগাতে চাইছে।’’ আর সুজন বলেন, ‘‘দু’মাসের যাত্রা কর্মসূচিতে স্পষ্ট, মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েত ভোটকে ভয় পাচ্ছেন। নিজেদের গোছাতে পারেননি, মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে, তাই ভোট করতে ইতস্তত করছেন?’’ অভিষেক অবশ্য এই প্রশ্নে আমল না দিয়ে বলেন, ‘‘দলের কর্মসূচি চলবে। তার মধ্যে কমিশন ভোট ঘোষণা করে দিলে, সেই মতো ভোট হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement