বাংলাতে ধীরেসুস্থে এগোতে চাইছে আপ।
দিল্লির পরে পঞ্জাব দখলে এসেছে। এ বার বাংলার মাটিতে জমি খুঁজছে আম আদমি পার্টি (আপ)। রাজ্যে বিচ্ছিন্ন ভাবে সমর্থক থাকলেও এত দিন রাজ্যে সে ভাবে সাংগঠনিক চেহারা ছিল না আপের। একই সঙ্গে ছিল না কোনও ভাল দফতর। কলকাতায় একটি ঠিকানা থাকলেও এখন আর তাতে ভরসা করতে চাইছেন না আপ নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে সমর্থক ও সংগঠন তৈরির উদ্যোগের পাশাপাশি কলকাতায় একটি দফতর বানানোর জন্য রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশও দিয়েছেন দিল্লির নেতারা। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরেই মধ্য কলকাতায় দফতর বানানোর জন্য বাড়ি ভাড়া নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তবে গোটাটাই চলছে চুপচাপ।
কারণ, দিল্লি থেকেই নির্দেশ এসেছে, আপাতত গোপনে কাজকর্ম করতে হবে। মুখপাত্রদেরও এ নিয়ে মুখ খোলাও বারণ। তাঁরা জানাচ্ছেন, নেতৃত্ব বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি রাজ্য পর্যায়ের কমিটি গঠন হবে এবং তার পরেই সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলা যাবে। ইতিমধ্যে আপ মহিলা শাখার স্টিয়ারিং কমিটি গঠন হয়ে গিয়েছে। সেই প্রসঙ্গে দলের উত্তর ২৪ পরগনার নেত্রী তুলিকা অধিকারী বললেন, ‘‘আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন। তার পরেই আমরা সব জানিয়ে দেব।’’
বুধবার নাগের বাজারে আপের সদস্য সংগ্রহ অভিযান।
অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি গঠনের সময়েই পশ্চিমবঙ্গে বিচ্ছিন্ন ভাবে ওই দলের কাজকর্ম শুরু হয়। মধ্য কলকাতার এন্টালি বাজারের কাছে দেব লেনে তৈরি হয় একটি দফতরও। তবে এখন সেটিকে রাজ্য দফতর বলে মানতে চাইছেন না নতুন করে বাংলায় সংগঠন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া আপ কর্মীরা। তবে এ বারও দল চাইছে, মধ্য কলকাতারই কোথাও খোলা হবে রাজ্য দফতর। ভাড়াবাড়ি খোঁজার কাজে যুক্ত এক আপ সমর্থক জানান, দক্ষিণ কলকাতায় দফতর চাইছেন না নেতৃত্ব। হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে যাতে সহজে ‘আম আদমি’ আসতে পারেন সেটা মাথায় রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে খেয়াল রাখা হচ্ছে মেট্রো রেলের মাধ্যমেও যাতে ওই দফতরে যাতায়াত করা যায়।
পঞ্জাবে যে আপ ক্ষমতা দখল করছে, তা স্পষ্ট হওয়ার পরে পরেই বাংলার নানা প্রান্তে শুরু হয় আপ সমর্থকদের তৎপরতা। মালদহ থেকে শিয়ালদহ— সর্বত্র আপ সমর্থকদের উল্লাস দেখা যায়। মালদহের রতুয়ায় আপ সমর্থক অনিমেষ সাহা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে সদস্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে, সামনে পঞ্চায়েত ভোট আছে, তাতে সর্বত্র প্রার্থী দেব আমরা।’’ উত্তর ২৪ পরগনায় আপের পক্ষে তুলিকা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ৬ মাসের মধ্যে প্রত্যেক ব্লকে সংগঠন বিস্তারের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘‘যেখানে যেখানে সংগঠন তৈরি করতে পারব সেখানেই ভোটে প্রার্থী দেব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশে লড়াই চালাচ্ছি। মানুষ চাইলে আমরা বাংলাতেও জিতব।’’ তবে এখন চুপ তুলিকা।
রবিবার কলকাতায় ‘পদার্পণ যাত্রা’ নাম দিয়ে একটি মিছিলও করেন আপ সমর্থকরা। রাজ্যে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জন মুখপাত্র নিয়োগ করেছেন আপের দিল্লি নেতৃত্ব। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তৈরি হয়েছে হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ। কিন্তু আপাতত সকলেই চুপ থাকতে চাইছেন। এ ক’দিন যাঁরা বিভিন্ন ইস্যুতে আপের হয়ে কথা বলছিলেন তাঁরাই এখন বলছেন, আগামী দিন দশেক আমাদের চুপ থাকতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশ দিয়েছেন বাংলায় আপের পর্যবেক্ষক সঞ্জয় বসু। কেন এমন চুপচাপ দলের দফতর খোঁজার কাজ হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে সঞ্জয়ের সঙ্গে বেশ কয়েক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্যে যত ক্ষণ না কোনও সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হচ্ছে তত ক্ষণ নীরব থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেজরীবালের দল।
কথা না বললেও কাজ থেমে নেই। ইতিমধ্যেই আপের পশ্চিমবঙ্গ শাখার নামে ফেসবুক, টুইটার অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে। আর তার মাধ্যমে চলছে সদস্য সংগ্রহ অভিযান। রাজ্যের সব জেলার জন্য আলাদা আলাদা ফোন নম্বর ঠিক করে আগ্রহীদের মিস্ড কল দিতে বলা হচ্ছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। গত রবিবারই এমন ক্যাম্প দেখা গিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে। বুধবার এমন একটি ক্যাম্প হয় কলকাতার নাগেরবাজার এলাকায়।