উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে ইসিএল। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
মাঝরাতে বিকট আওয়াজ। বছর পঁয়তাল্লিশের এক মহিলাকে নিয়ে গর্তে তলিয়ে গেল দু’কামরার বাড়ি। শুক্রবার রাতে পশ্চিম বর্ধমানের জামবাদ খোলামুখ খনির অদূরে একটি হোটেল ও আর একটি বাড়িও ধসেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় ন’ঘণ্টা পরে শুরু হয় উদ্ধারকাজ। শনিবার রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি মহিলার।
গাড়ির যন্ত্রাংশের মিস্ত্রি মিরাজ শেখ জানান, ঘরে তিনি ও তাঁর স্ত্রী শাহনাজ বেগম ঘুমোচ্ছিলেন। রাত ২টো নাগাদ বাড়ি কেঁপে ওঠে। সঙ্গে বিকট শব্দ। মিরাজ বাইরে বেরোলেও আটকে পড়েন শাহনাজ। মিরাজের কথায়, ‘‘নিমেষে শাহনাজকে নিয়ে বাড়িটা তলিয়ে গেল!’’ এ ছাড়া, পাশে স্বপন ঘোষের ভাতের হোটেল ও ইন্দর রজক নামে এক জনের বাড়িও তলিয়ে যায়। সে সময়ে হোটেলে কেউ ছিলেন না। ইন্দরবাবু বেরিয়ে আসেন।
শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি গেলে উদ্ধারকাজ কেন শুরু হয়নি, সে প্রশ্ন তোলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বেলা ১১টা নাগাদ উদ্ধারকাজ শুরু করে ইসিএল। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫০ ফুট নীচে বাড়িগুলি তলিয়ে গিয়েছে বলে অনুমান ইসিএলের উদ্ধারকারী দলের। ঘটনাস্থলে এ দিন দেখা গেল, কুড়ি ফুট চওড়া, দশ ফুট লম্বা গর্ত হয়েছে। তলা দেখা যাচ্ছে না।
এক ইসিএল-কর্তা দাবি করেন, নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের উদ্ধারকাজ করার কথা নয়। মানবিকতার খাতিরে করা হচ্ছে। যখন ‘প্রক্রিয়া মেনে’ খবর এসেছে, তখনই উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। তাঁর সংযোজন, ‘‘এলাকাটিতে জামবাদ খোলামুখ খনির সম্প্রসারণ হবে। ওখানে থাকা যে নিরাপদ নয়, তা আগেই জানানো হয়েছিল বাসিন্দাদের।’’ মিরাজ, স্বপনবাবু, ইন্দরবাবুদের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আগে পুনর্বাসন দিক সরকার। না হলে পরিবার নিয়ে কোথায় যাব!’’ বিষয়টি নিয়ে তদ্বির করার আশ্বাস দেন জিতেন্দ্রবাবু। পুনর্বাসনের জন্য জমি খোঁজার দায়িত্বপ্রাপ্ত আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মোট ২৯ হাজার আবাসন তৈরি হবে। ১২ হাজার আবাসনের কাজ শেষের মুখে। বাকিগুলির জন্য জায়গার খোঁজ চলছে।’’ ইসিএল-এর কাজোড়া এলাকার জেনারেল ম্যানেজার জেএস চন্দ্ররাই বলেন, ‘‘ওই এলাকায় মাটির তলা ফাঁকা থাকায়, ওই খনির নীচে জলের অভাবে বা উপরি ভাগের মাটি আলগা হয়ে বিপত্তি ঘটে থাকতে পারে।’’
আরও পড়ুন: নিয়োগপত্র নেই, সরব টেট পাশ ১২০০ প্রার্থী