গ্রেফতারের পরে বাবলি মুখোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
এক সময়ে তিনি বিজেপি করতেন, এখন ‘সমাজসেবী’ হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। নীতি পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ভরা কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডে ভিন্ন ধর্মের প্রণয়ী যুগলের চুল কেটে নিয়েছেন তিনি। কেড়ে নিয়েছেন মোবাইল। এবং নিজেই সেই ভিডিয়ো ফেসবুকে পেজে আপলোড করেছেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ বাবলি মুখোপাধ্যায় নামে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করে সারা রাত আটকে রাখা ও মোবাইল ছিনতাইয়ের মামলা রুজু করেছে। শুক্রবার তাঁকে কৃষ্ণনগর আদালতে হাজির করানো হলে সাত দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নদিয়ার কৃষ্ণনগরে বিজেপির মিটিং-মিছিলে এক সময়ে পরিচিত মুখ ছিলেন বাবলি। পুলিশ জানিয়েছে, বছর কয়েক ধরে তিনি ‘সমাজসেবী’ বলে নিজের পরিচয় দিয়ে দাম্পত্য কলহে সালিশি করে আসছিলেন এবং সেই সব ভিডিয়ো নিজের ফেসবুক পেজ মারফত ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। সালিশির জন্য তিনি মোটা টাকাও নিতেন। কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অফিসও খুলে বসেছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টা নাগাদ অফিস বন্ধ করার সময়ে বাবলির দুই সহযোগী যুবক ওই ছেলেমেয়ে দু’টিকে দেখে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। সেই সময়েই গাড়িতে করিমপুর থেকে এসে হাজির হন ছেলেটির মা ও দুই আত্মীয়। দুই সহযোগী সকলকেই বাবলির অফিসে নিয়ে আসে। বাবলির দাবি, “জানতে পারি, ছেলেটির বয়স প্রায় আঠারো বছর। মেয়েটির চোদ্দো, বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে। ফেসবুকে আলাপ। মেয়েটি ছেলেটির সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। আর ছেলেটির বাড়ির লোক তাদের নিতে এসেছে।”
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, রাতেই বাবলি মেয়ের মাকে ফোন করে ডেকে পাঠান। বাকিদের অফিসে আটকে রাখেন। বুধবার সকালে মেয়েটির মা এলে দুই পরিবারের লোকজনকে মুখোমুখি বসিয়ে সালিশি শুরু করেন বাবলি। বাড়ির লোকের সামনেই ছেলেটিকে চড়থাপ্পড় কষাতে থাকেন তিনি। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি ছেলেমেয়ে দু’টিকে অফিস থেকে বার করে সকলের সামনেই মারধর করতে থাকেন। বাসস্ট্যান্ড হাজির ভিড়ের সামনেই তিনি ছেলেমেয়ে দু’টির চুল কেটে নেন। দুই পরিবারের লোকজন থামতে অনুরোধ করলেও তিনি তা শোনেননি। পরে অবশ্য ছেলেটি ও মেয়েটি নিজের বাড়ি ফিরে যায়।
বাবলির দাবি, যুবকের মোবাইলে মেয়েটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি ছিল বলেই তিনি তা কেড়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের নজরে আসে। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পাল বলেন, “আমরা তদন্ত চালিয়ে ওই মহিলার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছি।” বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদার বলছেন, “এক সময়ে ওই মহিলা আমাদের দল করতেন ঠিকই। তবে নানা কারণে বছর দুয়েক আগেই দল তাঁর সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।”