Paschimbanga Diwas

রাজ্য সঙ্গীত, রাজ্য দিবস নিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব আনল তৃণমূল, বিজেপি যাচ্ছে রাজ্যপালের কাছে

এর আগে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন, বাংলার বিভিন্ন মহলের বিশিষ্ট জনেদের ডেকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হবে। সেই মতো গত ২৯ অগস্ট নবান্নে সভাঘরে ডাকা হয়েছিল সর্বদল বৈঠক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৬
Share:

বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।

পূর্ব নির্ধারিত সূচি মোতাবেক রাজ্য সঙ্গীত এবং রাজ্য দিবস নিয়ে প্রস্তাব আনা হল বিধানসভায়। ১ বৈশাখকে রাজ্য দিবস করার পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে ওই প্রস্তাবে। এর পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটিকে রাজ্য সঙ্গীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার তৃণমূল পরিষদীয় দলের তরফে এই প্রস্তাব আনা হয়েছে। প্রস্তাবক হিসাবে নাম রয়েছে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুশীল সাহা, বিরবাহা হাঁসদা, সত্যজিৎ বর্মণ, কালীপদ মণ্ডল, বিশ্বজিৎ দাস এবং কৃষ্ণ কল্যাণীর। যদিও বাংলা দিবস ঘোষণার বিরুদ্ধে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানাতে রাজভবনে যাচ্ছেন বিজেপি বিধায়কেরা। বিজেপি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টে নাগাদ বিধানসভা থেকে মিছিল করে রাজভবনের উদ্দেশে যাবেন দলীয় বিধায়কেরা।

Advertisement

রাজ্য দিবস এবং রাজ্য সঙ্গীত নিয়ে প্রস্তাব আনার বিষয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “রাজ্যপাল এই প্রস্তাবে সই করবেন না। রাজ্যের নাম পরিবর্তন, বিধান পরিষদ গঠনের মতোই হাল হবে এই প্রস্তাবের।” উল্লেখ্য, এই বিষয়গুলি নিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করানো হলেও সেগুলি এখনও পর্যন্ত কার্যকর করা যায়নি।

পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে কোন দিনটিকে বেছে নেওয়া হবে, তা নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই বিতর্ক চলছে রাজ্য রাজনীতিতে। রাজ্য বিজেপির তরফে স্থির হয়েছিল ২০ জুন তারিখটিকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে পালন করা হবে। কারণ, ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার ভোটাভুটিতে বাংলা ভাগের বিষয়টি স্থির হয়েছিল। বাংলা দু’ভাগে ভাগ হয়ে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গ ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়। বাংলাদেশ আলাদা হয়ে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু রাজ্যের শাসকদল তো বটেই, বিশিষ্টজনদের একাংশেরও বক্তব্য, দেশভাগের সঙ্গে বেদনার স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। তাই ওই দিনটি পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পেতে পারে না।

Advertisement

গত ২০ জুন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করেছিলেন রাজ্যপাল বোস। কিন্তু ওই দিনটিকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ মানতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে ফোনে অনুরোধ জানিয়ে এবং পরে চিঠি লিখে রাজ্যপালকে এই আয়োজন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় থেকে রাজভবনে ওই দিনই ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করেন রাজ্যপাল। এর পাল্টা জবাব দিতে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ কবে, তা ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা ইতিহাসবিদ সুগত বসুকে উপদেষ্টা করে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস নির্ধারণ কমিটি’ তৈরি হয়। আহ্বায়ক করা হয় বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই কমিটির বৈঠকে পয়লা বৈশাখকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে পালন করার সুপারিশ করা হয়েছিল। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন, বাংলার বিভিন্ন মহলের বিশিষ্টজনদের ডেকে এ ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়া হবে। সেই মতো গত ২৯ অগস্ট নবান্নে সভাঘরে ডাকা হয়েছিল সর্বদল বৈঠক। যদিও এই বৈঠকে বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমের কোনও প্রতিনিধি যোগ দেননি।

বৈঠকে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা এবং রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিরা মতামত জানানোর পর দেখা যায় পছন্দের পাল্লায় ওজন ভারী পয়লা বৈশাখেরই। তবে তাকে টক্কর দেওয়ার মতো বেশ কয়েকটি ‘দাবিদার’ও ছিল। তার মধ্যে অক্ষয় তৃতীয়া, রাখিপূর্ণিমার মতো দিন যেমন ছিল, তেমনই আলোচনায় উঠে আসে ১৫ অগস্ট, ২৩ জানুয়ারির মতো দিনও। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গের ‘রাজ্য সঙ্গীত’ নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও বদলে যায় শেষ মুহূর্তে। মুখ্যমন্ত্রী প্রায় ঘোষণা করেই ফেলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটিকে রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হবে। কিন্তু তা নিয়েও শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য হতে পারেননি উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা। মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন, বাংলার মাটি গানটির কয়েকটি শব্দ বদলাতে। ‘বাঙালি’ শব্দটির বদলে ‘বাংলা’ শব্দের প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই প্রস্তাব নিয়ে শেষ পর্যন্ত সহমত হতে পারেননি সকলে। তাই এ নিয়েও সিদ্ধান্ত পিছিয়ে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement