ক’দিন ধরেই ত্রস্ত ছিল এ রাজ্যের উপকূলের জেলাগুলি। শনিবার সকাল থেকেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ প্রান্তে আকাশ কালো করে শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। সঙ্গে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া। তবে আয়লার স্মৃতি উস্কে দিলেও অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের হুঙ্কারে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যদিও তার ছোবলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকাগুলি।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ সাগরদ্বীপ ও ফ্রেজারগঞ্জের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে ডাঙায় প্রবেশ করতে শুরু করে বুলবুল। তখন তার সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, স্থলভূমিতে ঢোকার সময় বুলবুলের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১৫-১২৫ কিলোমিটার। মাঝে তা ১৪৫ কিলোমিটারে ওঠে। সেই সর্বোচ্চ গতিবেগ তিন মিনিট স্থায়ী ছিল।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার রাজ্যে আছড়ে পড়ার পর শক্তি হারাতে শুরু করে বুলবুল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা অতি ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের পরিণত হয়। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এটি নিম্নচাপের পরিণত হতে পারে বলে মনে করছেন আবহবিজ্ঞানীরা। এর জেরে রবিবারও দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ব়ৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বুলবুলের চোখরাঙানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলবর্তী এলাকাগুলি। পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই ঘূর্ণিঝড়ের দাপট ছিল সবচেয়ে বেশি। সুন্দরবনের জনমানবহীন এলাকাতেও তাণ্ডব চালিয়েছে তা।
বুলবুলের তাণ্ডবে দুই মেদিনীপুর, হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি ও মৈপিঠে প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়ে। ভেঙে যায় মাটির ঘরও। ওই জেলায় সব থেকে বেশি প্রভাব পড়েছে নামখানা, সাগরদ্বীপ ও মৌসুমী দ্বীপে। নামখানায় ভেঙে যায় দু’টি জেটি। দিঘা-শঙ্করপুরেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বুলবুল আসার আগে শনিবার সকাল থেকেই কলকাতায় শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। সঙ্গে বইতে থাকে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া। রাত পর্যন্ত তার বিরাম ছিল না। রাতে বুলবুলের দাপটে সাদার্ন অ্যাভিনিউ বা কাঁকুড়গাছি এলাকা-সব কলকাতার বহু জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ে। তবে পুরসভার তৎপরতা ও রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় যানজট এড়ানো গিয়েছে।
রবিবার কলকাতার আকাশে রোদ দেখা দিলেও রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্কতা ছিল চরমে। এ দিনও দিঘা, মন্দারমণি, তালসারি, শঙ্করপুর, বকখালি ও সাগরদ্বীপে পর্যটকদের সমুদ্রে নামা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের ধারণা, রবিবার ক্রমশ শক্তি হারিয়ে বুলবুল দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে বাংলাদেশের খেপুপাড়ায় ঢুকেছে। ফলে এ দিনও দুই পরগনা এবং পড়শি বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অংশে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বুলবুলের প্রভাব রুখতে আগে থেকেই সতর্ক দৃষ্টি ছিল রাজ্য প্রশাসনের। নবান্ন সূত্রে খবর, ঝড়ের আগেই পূর্ব মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকা থেকে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩১৫ জনকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১ লক্ষ ১২ হাজার ৩৬৫ জন ত্রাণ শিবিরে ছিলেন। ঝড়ের গতিবিধির উপর নজর রেখেছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরা।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, রবিবার আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল তার শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। উত্তর ও দক্ষিণ, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং নদিয়াতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বুলবুলের শক্তি ক্রমশ হ্রাস পেলেও উপকূলবর্তী এলাকার মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া নিষেধাজ্ঞা আপাতত উঠছে না। আগামী ১২ ঘণ্টা সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। এ ছাড়া, সমুদ্র সৈকত এবং বন্দর অংশে জারি করা হয়েছে সতর্কতা।