(বাঁ দিকে) দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালগাড়ির ইঞ্জিনের চালকের মৃতদেহ। অমিত বণিক (ডান দিকে)।
রাঙাপানি স্টেশন সবে পার করে ট্রেন তখন সিগন্যালে দাঁড়িয়েছে। আচমকা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি। জোর ধাক্কায় আসন থেকে ছিটকে পড়লেন সহযাত্রীদের অনেকে। ছিটকে পড়ে এক শিশুর মাথা ফেটে গেল। বাঁচাতে গিয়ে তার মায়েরও মাথা ফেটে গেল। সেই অবস্থায় কামরার বাইরে বার হতে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল।
চোখের লহমায় ঘটনাগুলো ঘটে গেল। চোখের সামনেই।
ভয় পেয়েছিলাম প্রচণ্ড। কোনও ভাবে বাইরে বেরিয়ে দেখলাম, ভয়াবহ চিত্র। আমাদের কয়েকটি কামরার পরেই ছিল অসংরক্ষিত কামরা, গার্ডের কামরা। সে সব দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। ভিতর থেকে আর্তনাদ ভেসে আসছে। অনেকে সেখান থেকে বেরোনোর চেষ্টা করছেন। এলাকার মানুষও দৌড়ে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। কত জন যে জখম, কত জন মারা গেলেন, বুঝতে পারছিলাম না! শুধু মনে হচ্ছিল, অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।
ভোরে উঠেছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে। নিউ কোচবিহার স্টেশনে ট্রেন পৌঁছনোর সময় ছিল ভোট সাড়ে ৪টে। রাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। রায়গঞ্জে যাচ্ছিলাম। সংরক্ষিত তিন নম্বর কামরায় ছিলাম। একটু ঘুম-ঘুম ভাবও ছিল। এনজেপি (নিউ জলপাইগুড়ি) স্টেশনে পৌঁছনোর পরে, ঘুম অনেকটা কেটে যায়।
বেসরকারি সংস্থায় কাজ করি। সে জন্য আমাকে মাসে দুই-তিন বার কোচবিহার-রায়গঞ্জ যাতায়াত করতে হয়। এই ট্রেনেই যাতায়াত করি। আমার মতো হাজার হাজার মানুষ এই ট্রেনের উপরে ভরসা করেন। সে ট্রেনের এমন অবস্থা হবে, ভাবিনি! সিগন্যালের অপেক্ষায় একটি ট্রেন লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সে সময় আর একটি ট্রেন পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে, এমন ঘটনা ভাবা যায় না! এমন হলে তো সব রেলযাত্রাই বিপজ্জনক।
এই দুর্ঘটনা, এত মৃত্যুর দায় কার? খুঁজে বার করে শাস্তি দেওয়া হোক, যাতে আর এমন ঘটনা না ঘটে।
লেখক: কোচবিহারের ট্রেনযাত্রী
অনুলিখন: নমিতেশ ঘোষ