— প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বাড়বাড়ন্তে সুপ্রিম কোর্টের বার্তার প্রেক্ষিতে সমাধান-সূত্র খুঁজছে রাজ্য। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। রাজ্যে পথ দুর্ঘটনা কমাতে আইআইটি খড়্গপুরের তৈরি একটি নির্দেশিকা সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ প্রকাশ করেন।
রাজ্যে ফি-বছর পথ দুর্ঘটনায় প্রায় ৬০০০ জনের মৃত্যু ঘটে বলে সরকারি সূত্রে প্রকাশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এই মৃত্যুমিছিল অর্ধেকে নামিয়ে আনতে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বছরে ১০ শতাংশ হারে কমিয়ে আনতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। এর প্রেক্ষিতেই খড়গপুর আইআইটির সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী রাজ্যের সড়ককে একাধিক ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। রাস্তা অনুযায়ী যানবাহনের গতিও ঘণ্টায় ২৫ থেকে ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের পরিবহণ দফতর ছাড়াও স্বাস্থ্য, স্কুল শিক্ষা, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, নগরোন্নয়ন, পূর্ত দফতর এবং কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ মিলে গতি সংক্রান্ত নির্দেশিকাটি কার্যকর করবে।
এই পরিকল্পনার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত খড়গপুর আইআইটি-র পরিবহণ সংক্রান্ত বিভাগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ভার্গব মৈত্র বলেন, ‘‘গাড়ির গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার হলে প্রাণহানির আশঙ্কা ২০ গুণ বেড়ে যায়।’’ এ প্রসঙ্গে পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পথ দুর্ঘটনা কমাতে স্পিড ম্যানেজমেন্ট বা গতি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ব্যবস্থাই কাজে আসবে বলে মনে করছি।’’
গ্রামাঞ্চলে কিছু রাস্তায় সাইকেল, মোটরবাইকসহ বিভিন্ন গাড়ির লেন ভাগ করা না-থাকলেও তা জাতীয় বা রাজ্য সড়কে মিশেছে। কোথাও আবার রাস্তার ধারেই হাট, বাজার। ঠিক হয়েছে, ওই ধরনের রাস্তায় গাড়ির সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায়
৩০ কিলোমিটার। কাছাকাছি স্কুল থাকলে ২৫ কিলোমিটার। হাট-বাজার, স্কুল ব্যতিরেকে যে সব রাস্তায় মোটরবাইক, সাইকেলের সংখ্যা ২০ শতাংশের কাছাকাছি সেখানে যানবাহনের গতি ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সব রাস্তায় সাইকেল, মোটরবাইকের সংখ্যা ১০ শতাংশের কম, বাজারহাট নেই, সেখানে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানো যাবে। রাস্তায় লেন ভাগ করা থাকলে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিও গ্রাহ্য। যেখানে রাস্তা মসৃণ, নির্দিষ্ট লেনে ভাঙা, কম গতির যানবাহন বিরল— সেখানেঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে গাড়ি চালানো যাবে।
শহর এলাকায় আগের বৈশিষ্ট্য মাথায় রেখে ঘণ্টায় ২৫, ৪০ এবং ৫০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কলকাতায় বাস এবং রাতের দিকে ধাবমান ভারী ট্রাকের গতি থাকবে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার। নির্দেশিকা কার্যকর করতে বিভিন্ন রাস্তার সমীক্ষা করে সঙ্কেত চিহ্ন বসানো হবে।