বর্তমানে এই বাড়িতেই থাকেন ফুলটুসিরা।
একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও এখনও ‘ডাইনি’ অপবাদে গ্রামছাড়া হতে হচ্ছে মানুষকে। কখনও অত্যাচার এবং খুনের মতো ঘটনাও ঘটছে। এ রাজ্যেও তেমনই একটি পরিবার ডাইনি অপবাদে গ্রামছাড়া ১৮ বছর ধরে। এ গ্রাম ও গ্রাম ঘুরে যাযাবরের মতো জীবন কাটাতে হচ্ছে। এমনকি পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছিল যে পরিবারটিকে ১৫ বছর ধরে খুদ খেয়ে কাটাতে হয়েছে। ঘটনাটি বীরভূমের পাড়ুই থানার গোপালনগর গ্রামে।
২০০৩-এ গ্রাম ছাড়া হয়েছিল ফুলটুসি হাঁসদার পরিবার। তাঁকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে গ্রামের লোকেরা বাড়িছাড়া করেছিলেন। চার ছেলেমেয়ে এবং স্বামীকে নিয়ে এ গ্রাম ও গ্রাম ঘুরে ঘুরে ১৮ বছর ধরে যাযাবরের মতো জীবন কাটিয়ে শেষমেশ বাঁধনবগ্রামে ঠাঁই হয় তাঁদের।
ফুলটুসি জানান, তিনি ও তাঁর স্বামী জমিতে জনমজুরের কাজ করতেন। সকালে বেরিয়ে যেতেন বোলপুরে কাজ করতে। সন্ধ্যায় ফিরতেন। তার পর রান্নাবান্না করতেন। ছেলেমেয়রাও পড়াশোনা করত। ফলে রাত ১০টা বেজে যেত। তাঁর অভিযোগ, এখানেই আপত্তি ছিল গ্রামবাসীদের। কেন অত রাত পর্যন্ত আলো জ্বালিয়ে রাখা হবে! অতএব ‘নিদান’ এল আলো জ্বালানো যাবে না। একই সঙ্গে প্রশ্ন ঘুরতে থাকে, অত রাত পর্যন্ত কী করেন ফুলটুসি? সেই থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। ফুলটুসিকে ডাইনি অপবাদ দেওয়া হল। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে-সমেত গ্রামছাড়াও করা হল। সেই থেকেই যাযাবরের মতো ঘুরে, খুদ খেয়ে জীবন কাটিয়ে অবশেষে বাঁধনবগ্রামে আশ্রয় পেয়েছেন তাঁরা।
ফুলটুসির আরও অভিযোগ, তাঁর ছেলেমেয়েদের বইখাতা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে বিষয়টা জানিয়েছিলেন। তারা গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। গ্রামের সে বাড়ি আর ফেরতও পাননি ফুলটুসিরা। ফেরার জন্য আকুল হয়ে আছেন ফুলটুসি। কিন্তু ধরা গলায় বলেন, “গ্রামের মানুষ এখনও পর্যন্ত মেনে নেয়নি আমাদের। গ্রামে ফিরতে চাই, কিন্তু উপায় নেই।” ফুলটুসির ছেলে বলেন, “মাকে ডাইনি অপবাদ দেওয়ার পর সমাজে মিশতে অনেক সমস্যা হয়েছে আমাদের। পড়াশোনার অসুবিধা হয়েছে। অবিলম্বে আমাদের সমাজ এই কুসংস্কার মুক্ত হওয়া উচিত। আমরা চাই যেন এ রকম ভোগান্তি আর কারও না হয়।”
বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়ের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমার কাছে এখনও পর্যন্ত এই ধরনের কোনও খবর আসেনি। এ রকম কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে ওই পরিবারটিকে পুনর্বাসন দেওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা করবে প্রশাসন।”