State News

মৃত্যুর সঙ্গে আট দিনের লড়াই শেষ ঋষভের

বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ফুলে ঢাকা গাড়িতে বাড়ি ফেরে ঋষভের দেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৫৪
Share:

সান্ত্বনা: ঋষভের বাবা সন্তোষকুমার সিংহের (ডান দিকে) পাশে দিব্যাংশুর বাবা গোপীনাথ ভগৎ। শনিবার এসএসকেএমে। ছবি: সুমন বল্লভ

মৃত্যুর সঙ্গে আট দিন পাঞ্জা লড়ে শনিবার ভোরে মৃত্যু হল পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম ছাত্র ঋষভ সিংহের (৭)। এ দিন ভোর ৫টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ওই দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম অন্য ছাত্র দিব্যাংশু ভগতের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

Advertisement

এ দিন সকালে এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে ঋষভের দেহের ময়না-তদন্তের পর শবদেহবাহী গাড়িতে ছেলেকে নিয়ে শ্রীরামপুরের ধোবিঘাটের বাড়ির দিকে রওনা হন ঋষভের বাবা সন্তোষকুমার সিংহ। তার আগে দিব্যাংশুর বাবা গোপীনাথকে জড়িয়ে ধরে সন্তোষ বলেন, ‘‘নিজের ছেলেকে তো বাঁচাতে পারলাম না, আপনার ছেলেকে বাঁচিয়ে তুলুন।’’

বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ফুলে ঢাকা গাড়িতে বাড়ি ফেরে ঋষভের দেহ। সন্তোষদের ফ্ল্যাটের সামনে তখন ভিড় ভেঙে পড়েছে। ফ্ল্যাটের ভিতরে ঋষভের মা প্রমীলা বড় ছেলে আয়ুষকে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছেন। বাবা সন্তোষ শুধু বলছিলেন, ‘‘ঋষভ যেখানেই থাকুক, ভাল থাকুক।’’

Advertisement

১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টা নাগাদ হুগলির কামদেবপুরে দিল্লি রোডে একটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে নয়ানজুলিতে পড়ে গিয়েছিল ঋষভদের পুলকার। জখম হয়েছিল চালক-সহ ১৬ জন পড়ুয়া। গুরুতর আহত ঋষভ ও দিব্যাংশুকে এসএসকেএমে নিয়ে আসা হয়। দু’জনের ফুসফুসে পাঁক ঢুকে গিয়েছিল। উন্নত চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করেও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া ঋষভকে বাঁচানো যায়নি।

আরও পড়ুন: শ্রীকৃষ্ণা বসু (১৯৩০-২০২০)

সন্তোষ শ্রীরামপুর পুরসভার কাউন্সিলর। ঘটনার পর থেকেই তাঁর পাশে রয়েছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাচ্চাটাকে বাঁচানো গেল না।’’ মিনতি কর্মকার নামে সন্তোষের এক পড়শি বলেন, ‘‘ঋষভের হাসিমুখ মনে পড়ছে। চালকের ভুলে এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’’ প্রতিবেশী দশরথ রাউতের কথায়, ‘‘পাপ্পু (সন্তোষের ডাকনাম) মানুষের আপদে-বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ওঁরই এত বড় ক্ষতি হল!’’

দিব্যাংশুর বাবা গোপীনাথ এ দিন ভোর থেকে সন্তোষের পাশে ছিলেন। বৈদ্যবাটির বাসিন্দা গোপীনাথকে ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। কখনও বন্ধুর গাড়িতে, কখনও বন্ধুর দেওয়া তাঁবুতে রাত কাটছে। তিনি জানান, ছেলে আগের চেয়ে কিছুটা ভাল হলেও, পুরো বিপদ কাটেনি।

এ দিন চাতরা কালীবাবুর শ্মশানঘাটে ঋষভের শেষকৃত্য হয়। সেখানে ছিলেন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর, ঋষভের স্কুলের অধ্যক্ষ প্রদীপ্তা চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঈশ্বর ঋষভের বাবা-মাকে শক্তি দিন।’’

যাঁর বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়িচালনার অভিযোগ উঠেছে, ঋষভদের গাড়ির চালক পবিত্র দাস আহত অবস্থায় এখনও হাসপাতালে। তার শ্বশুর নেপাল সাহা বলেন, ‘‘পাঁচ-সাত বছর ধরে ও গাড়ি চালাচ্ছে। আর কিছু বলতে পারব না।’’ পরিবারের লোকেরা জানান, ঘটনার জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন পবিত্রের স্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement