Water Shortage

Water Shortage: জল-যন্ত্রণা টাকির বিভিন্ন ওয়ার্ডে

বাসিন্দারা জানালেন, এই চত্বরে প্রায় এক কিলোমিটার অংশে কংক্রিটের উঁচু বাঁধ দরকার। তবে তা এখনও হল না।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

টাকি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:২১
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক দিকে পানীয় জলের জন্য হাহাকার। অন্য দিকে, নালার জমা জলের দুর্গন্ধ অতিষ্ঠ মানুষ। টাকি পুরসভার ১৪, ১৫, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে এই সমস্যা বহু বছরের। বিভিন্ন ওয়ার্ডেই নালা নিয়ে সমস্যা আছে বলে অভিযোগ মানুষের। যেমন, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত টাকি কলেজ মোড়, টাকি নতুন বাজার, টাকি বালিকা বিদ্যালয় চত্বরেও দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি হলেই প্রায় হাঁটুসমান জল জমে যায়। অথচ, এটাই পর্যটকদের টাকি রাজবাড়ি ঘাট চত্বরে যাওয়ার মূল প্রবেশপথ।

Advertisement

১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ছে নজরুল সৈকত, পুরাতন বাজার, হাসনাবাদ থানা চত্বর। এই জায়গাগুলিতে যে সমস্ত নালা রয়েছে, তা পচা জলে সারা বছর ভর্তি হয়ে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নালা সংস্কার হয় না সঠিক ভাবে। দুর্গন্ধ, মশা-মাছির উপদ্রবে বিরক্ত মানুষ। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে যায়। পাশের কাটাখাল নদীর জল জোয়ারে বা ভরা কটালে নদী ছাপিয়ে নজরুল সৈকত থেকে শুরু করে থানা, পুরাতন বাজার পর্যন্ত রাস্তায় প্রায় তিন ফুট জমে যায়।

বাসিন্দারা জানালেন, এই চত্বরে প্রায় এক কিলোমিটার অংশে কংক্রিটের উঁচু বাঁধ দরকার। তবে তা এখনও হল না। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাসনাবাদ থানা চত্বরে এক বাসিন্দা তপন তালুকদার বলেন, ‘‘বৃষ্টি হলেই রাস্তার জমা জল ঘরে উঠে আসে, দোকানের মধ্যে ঢুকে যায়। আবার ভরা কটালেও নদীর জল ঘরে চলে আসে। নদীবাঁধ খুবই দরকার।’’

Advertisement

নজরুল সৈকত চত্বরে রাস্তা ক্রমশ ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শম্ভু মণ্ডল, শুভঙ্কর ঘোষ জানান, দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে। পুরসভার পানীয় জলের গাড়ি সপ্তাহে এক-দু’দিন মাত্র আসে। সেই জল নিতে মারামারি হওয়ার মতো অবস্থা হয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে।

পুরসভার জলের মান খুব ভাল নয় বলেও অভিযোগ। রান্নার কাজ তাতে চলে। তবে পানীয় জল অনেকেই কিনে খান।

নালা ও পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে এই ওয়ার্ডগুলির বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শম্পা ঘোষ, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাপসী ঘোষ জানালেন, কাউন্সিলরকে বার বার বলেও নালায় জমা জলের কোনও সমাধান হয় না। সারাক্ষণ দুর্গন্ধ, মশা-মাছির উপদ্রব ভোগ করতে হয়।

১৫ এবং ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিজেপির দখলে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির কাউন্সিলর উমা মণ্ডলকে ফোন করা হলেও ধরেননি। মেসেজের উত্তর আসেনি। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অর্চনা ঘোষ বলেন, ‘‘বিরোধী দলের কাউন্সিলর হওয়ায় ফান্ড খুব কম পেয়েছি। তা দিয়ে যতটা সম্ভব বিভিন্ন জায়গায় কাজ করা হয়েছে। রাস্তা দিয়ে বড় গাড়ি চলাচলের জেরে রাস্তার পাশের নালাগুলি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে নালা সংস্কারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তা পাওয়া যায়নি।’’

অর্চনা আরও বলেন, ‘‘পানীয় জলের সমস্যা খুবই। সমাধানের ক্ষমতা আমার নেই। বার বার পুরসভাকে জানিয়েও আমার ওয়ার্ডে পানীয় জলের গাড়ি প্রয়োজন মতো আসে না।’’

বিদায়ী চেয়ারম্যান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় যদিও বলেন, ‘‘সব কাউন্সিলরকে সমান ভাবে মানুষের পরিষেবা দেওয়ার জন্য সাহায্য করা হয়েছে। কোনও বৈষম্য করা হয়নি।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিনোদ কলোনিতে আনুমানিক ২০১০ সাল নাগাদ বহু টাকা খরচ করে একটি পানীয় জলের প্রকল্প তৈরি হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, নদীর জলকে পরিস্রুত করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে তা ব্যারেলে করে পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ঘরের মধ্যে বড় বড় মেশিনপত্র বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডেও জলের সমস্যা আছে।

এ ছাড়া, ১১, ১২, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু কিছু জায়গায় পানীয় জলের সমস্যা আছে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাইসমিল এলাকার বস্তিতে থাকেন যাঁরা, তাঁরাও অনেকে বাধ্য হন জল কিনে খেতে।

এ বিষয়ে সোমনাথ জানান, কাটাখাল নদীর জলে এত বেশি আয়রন, প্রকল্পের ফিল্টার নষ্ট হয়ে যায় অল্প দিনের মধ্যে। তাই এখন ফলতা থেকে যে জলের পাইপ লাইন বসিরহাটে আসবে, সেটা যাতে হাসনাবাদ পর্যন্ত নিয়ে আসা যায়, তা দেখা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আশাবাদী, ২০২৪ সালের মধ্যে টাকি পুরসভার সব বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে যাবে।’’

নজরুল সৈকত চত্বরে নদীবাঁধের বিষয় সোমনাথ বলেন, ‘‘এই চত্বরে মজবুত কংক্রিটের বাঁধ করার জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা প্রয়োজন। তা দেওয়া পুরসভার পক্ষে সম্ভব নয়। সেচ দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে, চেষ্টা করা হচ্ছে বাঁধ করার।’’

জল জমার সমস্যা নিয়ে সোমনাথের বক্তব্য, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে যে সব জায়গায় জল জমার সমস্যার সুরাহায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু নালা বেহাল। তা নিয়ে প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর সুনীল সর্দার জানান, অনেক নালা ঠিক করা হয়েছে। আর কয়েকটি সংস্কারের প্রয়োজন আছে। সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ হবে। টাকির সিপিআই নেতা রঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘‘পুরসভার একদিকে কাটাখাল নদী, আর এক দিকে ইছামতী নদী। অথচ আজও নালার জমা জলের সমস্যায় জর্জরিত বিভিন্ন ওয়ার্ডের মানুষ। এ থেকে বোঝা যায়, পুরসভায় ২০১০ সালে তৃণমূলের বোর্ড গঠন হওয়ার পর থেকে কেমন কাজ হয়েছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement