Bangaon

নেতাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে জলের দাবি

বিধায়ক বিজেপির অশোক কীর্তনিয়া। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হিসেবে দলের পক্ষ থেকে এই এলাকায় ‘দিদির দূত’ হয়ে যাওয়ার নির্দেশ এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৩৩
Share:

বিধায়কের গাড়ি থামিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। নিজস্ব চিত্র

নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে বেরিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। মঙ্গলবার গিয়েছিলেন পাশের কেন্দ্র, বনগাঁ উত্তরে। গিয়ে স্থানীয় মানুষের ক্ষোভের আঁচ পেলেন তিনি। বিধায়ককে গাড়ি থেকে নামিয়ে পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ জানান গ্রামের মানুষ।

Advertisement

এখানে আবার বিধায়ক বিজেপির অশোক কীর্তনিয়া। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হিসেবে দলের পক্ষ থেকে এই এলাকায় ‘দিদির দূত’ হয়ে যাওয়ার নির্দেশ এসেছে। বিধায়ক হিসাবে এলাকার উন্নয়নের দায় বর্তায় অশোকের। তিনি পরে বলেন, ‘‘বিশ্বজিৎ দাস বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন দশ বছর ধরে। আমি ভোটে জিতেছি দেড় বছর মাত্র হল। উনি ঘাটবাঁওড় পঞ্চায়েতে কী উন্নয়ন করেছেন, এ জবাব ওঁকেই দিতে হবে।’’ অশোক জানান, বিধায়ক হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৬০ লক্ষ টাকা পেয়েছেন নিজের তহবিলে। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের পঞ্চায়েত বিধায়ক তহবিলের টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। এ সবের উত্তর দিতে হবে বিশ্বজিৎ দাসকে। উন্নয়ন হয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে। সেটা তৃণমূলের। রাজ্য সরকারও তৃণমূলের।’’

বিশ্বজিতের বক্তব্য, ‘‘আমি যখন বিধায়ক ছিলাম, এ সব এলাকায় নিয়মিত ভাবে আসতাম। মানুষের বহু সমস্যা মিটিয়েছিলাম। গত দেড় বছরে বিধায়ক কোনও কাজই করতে পারেননি। সে সব অভিযোগই শুনতে হচ্ছে এসে।’’ পঞ্চায়েত থেকে বিধায়ক তহবিলের কোনও টাকা ফেরানো হয়নি বলে জানান বিশ্বজিৎ। ঘাটবাঁওড় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মাসুমা মণ্ডল বলেন, ‘‘একটি পিচের রাস্তার জন্য বিধায়ক ১০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছেন বলে মেল এসেছে পঞ্চায়েতে। যদিও চেক আমরা এখনও হাতে পাইনি। সেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।’’

Advertisement

ঘাটবাঁওড় এলাকার চড়ুইগাছি গ্রাম থেকে বোয়ালদহ এলাকা দিয়ে যাওয়ার পথে বাজার এলাকায় এ দিন বিশ্বজিতের গাড়ি আটকান একদল মহিলা-পুরুষ। তাঁরা বিশ্বজিৎকে গাড়ি থেকে নামতে বলেন। বিশ্বজিৎ গাড়ি থেকে নামলে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা জানান, অনেক দিন হল পানীয় জল মিলছে না। স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকায় দু’টি পানীয় জলের প্রকল্প রয়েছে। একটি শীতল পানীয় জলের প্রকল্প। অন্যটি সজল ধারা প্রকল্প। শীতল পানীয় জলের প্রকল্পটি তৈরি হয়েছিল কয়েক বছর আগে। বিশ্বজিৎ তখন ছিলেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক। তাঁরই বিধায়ক তহবিলের টাকায় এই প্রকল্প তৈরি হয়। পরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সজল ধারা প্রকল্প থেকে কিছু দিন পানীয় জল পাওয়া গিয়েছিল। তারপর থেকে সেই প্রকল্পটিও খারাপ হয়ে পড়ে আছে। ঠিকাদারকে জানালেও তিনি কল মেরামত করছেন না বলে অভিযোগ।

বিশ্বজিৎ গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করে বলেন, “আগামী শুক্রবারের মধ্যে সজল ধারা প্রকল্প চালু করা হবে।”

চড়ুইগাছি গ্রামে পিচের রাস্তা অনেক দিন ধরে বেহাল। খানা-গর্তে ভর্তি। প্রবল ধুলোর দাপট। গ্রামের মানুষ রাস্তাটি নতুন করে তৈরি করে দেওয়ার দাবি তোলেন। এক মহিলা বিশ্বজিৎকে বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে ছেলেমেয়েরা সাইকেল নিয়ে স্কুলে যায়। মাঝে মধ্যেই সাইকেল নিয়ে পড়ে যাচ্ছে। আপনি দেখুন।”

বিশ্বজিৎ বলেন, “২০১১ সালে রাস্তাটি আমরা তৈরি করেছিলাম। তারপর আর মেরামত করা হয়নি। কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। আমরা রাস্তাটি সংস্কার করতে পদক্ষেপ করব।”

এক মহিলা এসে অভিযোগ করেন, “আমরা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পাইনি। কয়েক বার দুয়ারে সরকার শিবিরে গিয়ে আবেদন করেছি।” বিশ্বজিৎ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

শ্যামলি বিশ্বাস নামে এক মহিলা বলেন, “আমার নামে জবকার্ড আছে। কিন্তু কার্ডটি হাতে পাইনি। খবর পেয়েছি, বোয়ালদহ এলাকায় আমার কার্ডে কাজ হয়েছে। এক লক্ষের বেশি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।” বিশ্বজিৎ বলেন, “খোঁজ-খবর নিয়েছি। ওই মহিলার জবকার্ড ব্যবহার করে কেউ টাকা তুলে নেয়নি। পঞ্চায়েতে এসে নথিপত্র খতিয়ে দেখেছি।” গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বেহাল পরিকাঠামো নিয়েও মানুষ ক্ষোভ জানিয়েছেন।

নিত্যানন্দ শীল নামে এক বৃদ্ধ বিশ্বজিৎকে জানান, তাঁর নাম আবাস যোজনার তালিকায় ছিল। সেটি কেটে দেওয়া হয়েছে। ছেলেরা আলাদা থাকে। স্ত্রীকে নিয়ে টিনের বাড়িতে থাকেন তিনি। সংসার চালাতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই খেতমজুরি করেন। নিয়মিত কাজ মেলে না বলে অভিযোগ। নিত্যানন্দের দাবি, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে তিনি দল করেন। কিন্তু অনেক বছর ধরে পাকাবাড়ির আবেদন করেও মেলেনি। বৃদ্ধ বলেন, “আমপানে ঘরের টিন উড়ে গিয়েছিল। ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকাদিয়ে টিন কিনে ঘর মেরামত করেছিলাম। কিন্তু পাকাবাড়ি আজও পেলাম না।”

বিশ্বজিৎ তাঁকে বুধবার নথিপত্র নিয়ে পঞ্চায়েতে যেতে বলেন। বৃদ্ধ যাতে ঘর পান, তা দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

এক মহিলা বিশ্বজিতের গাড়ির সামনে গিয়ে বলেন, “দেখবেন, যাতে প্রকৃত গরিব মানুষ পাকাবাড়ি পান। এখানে আগে বাড়ি পেয়েছেন এমন মানুষেরা আবার পাকাবাড়ি পেয়েছেন।”

বিশ্বজিৎ মহিলাকে বলেন, “আপনি নিশ্চিত থাকুন। অযোগ্যদের প্রত্যেকের নাম আবাস যোজনায় তালিকা থেকে বাদ যাবে।” ঘাটবাঁওড় অঞ্চল আদর্শ বিদ্যালয়েও যান বিশ্বজিৎ। তিনি বলেন, “স্কুলকর্তৃপক্ষ একটি সাইকেল রাখার ছাউনির দাবি করেছেন। সেটি করে দেওয়া হবে।”

a

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement