fishing cat

পরিবর্তন, পিটিয়ে না মেরে বাঘরোল উদ্ধার গ্রামবাসীর

বাগদার হরিহরপুর গ্রামের চান্দিপাড়ায় প্রায় ২৫ফুট গভীর একটি পরিত্যক্ত কুয়োয় পড়ে যায় একটি বাঘরোল। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisement

নির্মাল্য প্রামাণিক

বাগদা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৩০
Share:

কুয়ো থেকে উদ্ধারের পর খাঁচায় বন্দি বাঘরোল। নিজস্ব চিত্র।

দর্শনেই বিপদ। বাঘরোলকে বাঘ ভেবে ভয়ে আক্রমণ। একটা সময় হামেশাই ঘটত এমন ঘটনা। এখন ভুল ভেঙেছে। অন্তত বাগদার হরিহরপুর গ্রামের চান্দিপাড়ার বাসিন্দারা দেখালেন, রাজ্য পশু বাঘরোল সম্পর্কে ধারনা বদলে গিয়েছে তাঁদের।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুর। বাগদার হরিহরপুর গ্রামের চান্দিপাড়ায় প্রায় ২৫ফুট গভীর একটি পরিত্যক্ত কুয়োয় পড়ে যায় একটি বাঘরোল। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁরাই পুলিশ ও বনগাঁর একটি পশুপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে খবর দেন। খবর যায় বন দফতরেও। খবর পেয়ে বনকর্মী, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বনগাঁর এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার। গর্তের মধ্যে ইলেকট্রিকের মই নামিয়ে, ‘স্টিক ল্যাসো’র সাহায্যে প্রায় ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় বাঘরোলটিকে উদ্ধার করা হয়। বুধবার বাঘরোলটিকে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া বাঘরোলটির সঙ্গীও সম্ভবত ওই এলাকাতেই আছে। এখন বাঘরোলের প্রজননের সময়। নিজের এলাকায় ফিরিয়ে দিতে পারলে ওই এলাকায় বাঘরোলের বংশবৃদ্ধি ঘটবে।’’

অশেষ বলেন, ‘‘ওই এলাকা থেকে আগেও আমরা কয়েকটি পূর্ণবয়স্ক ও শিশু বাঘরোল উদ্ধার করেছি। বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা বাঘরোল সংরক্ষণের বিষয়ে প্রচার চালাচ্ছি। ওই এলাকায় বাঘরোল মেরে খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। বাঘরোল মারতে নিষেধ করে বিকল্প হিসাবে মুরগির মাংস কিনে দেওয়া হয়েছে। বাঘরোলের খবর দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।’’সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন চান্দিপাড়ার বাসিন্দারা। কিন্তু আগে পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। বাগদার রণঘাট পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায়ই দেখা মেলে বাঘরোলের। রাতে তো বটেই, দিনের বেলাতেও এলাকার মেছোভেড়িতে বা ঝোপজঙ্গলে দেখা যায় এদের। কয়েকবছর আগেও এলাকার স্থানীয় মানুষজন বাঘরোল দেখতে পেলে চিতাবাঘের ছানা ভেবে ভয় পেয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। মেছোভেরিগুলির আশেপাশে বিষ মেশানো মাছ রেখে বা ফাঁদ পেতেও বাঘরোল মারা হত। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে ধীরে ধীরে। ওই এলাকায় কয়েকবছর ধরে বাঘরোল সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছে বনগাঁর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শিবির করে গ্রামবাসীদের সচেতন করার পাশাপাশি গেঞ্জিতে বাঘরোল সংরক্ষণের বার্তা ছাপিয়ে তা বিলি করা হয়েছে। সংস্থার সদস্য ধৃতিমান বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা ওই এলাকায় ক্যাম্প করে রাতে থাকি। ট্র্যাপ ক্যামেরায় বাঘরোলের ছবি তুলে গ্রামবাসীদের দেখিয়েছি। সচেতন করেছি। গ্রামবাসীরা বাঘরোলটিকে না মেরে সেটিকে উদ্ধার করতে যে ভূমিকা নিয়েছেন সেটা প্রশংসনীয়।’’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পাশাপাশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে প্রশাসনও। যার ফল মিলছে হাতে নাতে। গ্রামবাসীরা এখন বলছেন, ‘‘আমরা জানি, ওরা মানুষের কোনও ক্ষতি করে না। ওদেরও বাঁচার অধিকার আছে।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement