নিরাপত্তা: পুরভবনের সামনে মোতায়েন পুলিশ-র্যাফ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বনগাঁ পুর এলাকায় পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে চিন্তিত স্থানীয় মানুষজন। অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার তুলকালাম বাধে শহরে। সেই উত্তেজনার পরিবেশ এখনও চলছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে বহু বহিরাগত ভিড় করেছিল শহরে। তাদের অনেকের হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা, হকি স্টিক। মুখে রুমাল বেঁধে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে অনেককে। মঙ্গলবার টান টান নিরাপত্তার মধ্যেও ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে যে ভাবে ভিড় জমেছিল পুরসভার কাছে, তা নিয়েও দুর্ভাবনা ঘণীভূত হয়েছে শহরবাসীর মনে। আরও বড় কোনও গোলমালের আশঙ্কায় তটস্থ তাঁরা। বেশি রাতে খুব দরকার ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরেই পা রাখতে চাইছেন না।
এই আবহেই পুলিশ ও শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিজেপির তরফে বুধবার বিকেলে মিছিল বেরোয় শহরে। মিছিল পুরভবনের সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে বিজেপির মহিলা কর্মী-সমর্থকেরা সেখানে বিক্ষোভ দেখান। গোলমাল এড়াতে পুরসভার সামনে প্রচুর পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। এ দিন মিছিলে হাঁটেন বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার দুই সহ সভাপতি দেবদাস মণ্ডল ও মধুসূদন মণ্ডল। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘মঙ্গলবার পুরসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে ভোটাভুটির সময়ে পুলিশ ও তৃণমূল যৌথ ভাবে আমাদের দুই কাউন্সিলরকে দীর্ঘ সময় আটকে রেখেছিল। যদিও হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, তাঁদের গ্রেফতার করা যাবে না। তৃণমূলের বোমায় আমাদের কয়েকজন কর্মী জখম হয়েছেন।’’
বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছেন বনগাঁর তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপির সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার শহরে প্রতিবাদ মিছিল করবে বলে জানিয়েছে তণমূল। দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে বিজেপি বনগাঁর শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে তুলছে। বিজেপি যদি সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে চায়, তা হলে পাল্টা মারের জন্য ওরা যেন প্রস্তুত থাকে।’’
রাজনৈতিক এই দড়ি টানাটানির ঘটনায় স্বভাবতই কপালে ভাঁজ শহরবাসীর। চিন্তিত ব্যবসায়ী মহল। শহরের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বনগাঁর বাইরে থেকে ক্রেতারা শহরে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। বেচাকেনা কমেছে গত কয়েক দিনে। মঙ্গলবার অনেকেই ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাননি গোলমালের আশঙ্কা।
এক মহিলার কথায়, ‘‘সন্ধ্যার পর মেয়ের গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া থাকে। আগে একাই পড়তে যেত। এখন সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি। পড়া শেষে সঙ্গে করেই বাড়িতে ফিরছি।’’
লোকসভা ভোটে এ বার শহর এলাকা থেকে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর লিড পান। ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতেই বিজেপি এগিয়ে ছিল। তারপর থেকেই শহরে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের একাংশ অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর থেকে পুরসভায় ডামাডোল শুরু হয়। শহরের উন্নয়ন ও পুর পরিষেবা কার্যত থমকে যায়। মঙ্গলবার কংগ্রেসের একজন-সহ ৯ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে পুরসভায় গিয়েছিলেন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য। তিনি দাবি করেন আস্থা ভোটে তাঁরাই জয়ী হয়েছেন। তৃণমূলের তরফে শহরে মিছিল করা হয়। ১১ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে অনাস্থায় জেতার পাল্টা দাবি করে বিজেপিও।
বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ পুরসভায় আসেন শঙ্কর। ন’জন কাউন্সিলর ও পুরসভার সরকারি কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। দ্রুত উন্নয়ন কাজ শুরু করা ও পুর পরিষেবায় গতি আনার কথা বলেন। পুরসভার বিভিন্ন দফতরের কাজও ঘুরে দেখেন পুরপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘‘প্রায় দু’মাস হল পানীয় জল প্রকল্প, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস, স্যুইমিং পুল তৈরি-সহ নানা কাজ থমকে। সেগুলি এ বার জোর কদমে চালু করা হবে। তা ছাড়া পুর পরিষেবাও স্বাভাবিক করা হচ্ছে।’’
এত কিছুর পরেও অবশ্য শহরবাসীর আশঙ্কা কাটছে না।