স্বজনহারা: কান্না পরিবারের
এলাকার দখল কাদের হাতে থাকবে, তা নিয়ে নতুন করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমা-গুলির সংঘর্ষ শুরু হয় বুধবার ভোর থেকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক তৃণমূল কর্মীর। বাসন্তী থানার ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের ১১ নম্বর সর্দার পাড়ার ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম আমির আলি সর্দার (৫৮)। ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে যুব তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় বুধবার বিকেল পর্যন্ত উভয় পক্ষের মোট আঠারোজনকে গ্রেফতার করেছে বাসন্তী থানার পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকার ক্ষমতা কাদের হাতে থাকবে, তা নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ রয়েছে। বিশেষ করে বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েত এলাকায় গত প্রায় দু’মাসের বেশি সময় ধরে অশান্তি চলছে। মাঝে মধ্যেই বোমাবাজির ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার রাতেও এলাকায় বোমাবাজি হয়। বুধবার ভোর থেকে এলাকায় নতুন করে বোমাবাজি শুরু হয়। সে সময়ে বাজারে যাচ্ছিলেন আমির আলি। দু’পক্ষের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। পরিবারের অভিযোগ, তৃণমূল কর্মী হওয়ায় আমিরকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এলাকার যুব তৃণমূল কর্মী হান্নান সর্দার, ডাক্তার সর্দার, ফারুক সর্দার ও তাদের অনুগামীরা। পেটে গুলি লাগে আমিরের। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। খবর পেয়ে বাসন্তী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়।
পুলিশ এলে ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীরা চড়াও হয় অভিযুক্ত যুব তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে। ভাঙচুর চালায় সেখানে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এই ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত দশজন গুরুতর জখম হন। আহতদের বাসন্তী ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের ছেলে নবিরালি সর্দার বলেন, “আমরা তৃণমূল করি। সে কারণেই দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের উপরে অত্যাচার চালিয়ে আসছে যুব তৃণমূল। কিছু দিন আগেও আমাদের মারধর করে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল। এক সপ্তাহ জেল খেটে জামিনে গতকাল রাতে বাড়ি ফিরেছি। সেই রাত থেকে আবার অত্যাচার শুরু হয়েছে।’’
অভিযোগ, স্থানীয় ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের প্রধান ইউসুফ আনসারির নেতৃত্বে এলাকায় অশান্তি ছড়াচ্ছে যুব তৃণমূল। বাসন্তী ব্লক তৃণমূলের কনভেনর আব্দুল মান্নান গাজি বলেন, “পরিকল্পিত ভাবে বাসন্তীতে অশান্তি ছড়ানো হচ্ছে। দিনের পর দিন এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের উপরে হামলা করা হচ্ছে। সিপিএমকে সঙ্গে নিয়ে সওকত মোল্লা, আমানুল্লা লস্করের মদতে ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েত প্রধান ইউসুফ এলাকায় অশান্তি করছে।’’
যদিও এই ঘটনার পিছনে যুব তৃণমূলের হাত নেই বলেই দাবি করেছেন বাসন্তীর যুব তৃণমূল নেতা আমানুল্লা লস্কর। তিনি বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ঘরোয়া বিবাদ। সেই বিবাদে যুব তৃণমূলকে বদনাম করা হচ্ছে। এলাকার তৃণমূল নেতা জয়ন্ত নস্কর, আব্দুল মান্নান গাজিরাই অশান্তি ছড়াচ্ছে। আরএসপির লোকদের দলে ঢুকিয়ে অশান্তি করছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।’’
ঘটনার পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি। এলাকার আরএসপি নেতা সুভাষ নস্কর বলেন, “তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে। নিজেরা ঘর সামলাতে না পেরে আমাদের বদনাম করতে চাইছে।’’
এ দিন দুপুর থেকেই এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এলাকা থেকে প্রচুর তাজা বোম ও গুলির খোল উদ্ধার করা হয়েছে।