‘বুদ্ধিজীবীদের’ সংবর্ধনা দিচ্ছেন শওকত মোল্লা। —নিজস্ব চিত্র।
মাথায় চুল কমে এলে কত কী না করেন পুরুষেরা! সেলুনে গিয়ে বিশেষে কায়দায় চুল কাটিয়ে টাক ঢাকার চেষ্টা করেন। চুল গজানোর বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে দামি প্রসাধনী কিনে মাখেন। ইন্দ্রলুপ্ত হলে বন্ধুবান্ধব থেকে বাড়ির লোক পর্যন্ত ঠাট্টা-তামাশা করেন। উপহাসের পাত্র হন পরিচিত তো বটেই, অপরিচিত মহলেও। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে মাথায় টাক থাকার জন্যই ১০০ জন সংবর্ধিত হলেন। ‘বুদ্ধিজীবী’ হিসাবে সংবর্ধনা দিলেন তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা। স্থানীয়েরা মজা করে যেটাকে ‘টাক-সংবর্ধনা’ বলছেন। লক্ষ্মীপুজোয় শুরুটা হল দু’টি এলাকা দিয়ে। এর পরে গোটা বিধানসভাতেই টাকের সম্মান কর্মসূচি চলবে বলেও জানিয়েছেন বিধায়ক।
বিধায়ক শওকতের বিরুদ্ধে অনেক সময়েই অনেক অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপও তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ বার অভিযোগ নয়, নতুন কিছু করার নজিরও গড়লেন। মঙ্গলবারের কর্মসূচিতে উপস্থিত টাকের মালিকদের বিধায়ক নিজে হাতে গোলাপ দেন। সঙ্গে পাঞ্জাবি। আর বলেন, ‘‘টেকো মানেই বুদ্ধিমান, জ্ঞানী। টাক থাকে বুদ্ধিজীবীদের।’’ ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক এ-ও দাবি করেন যে, সবাই নতুন কিছু করার চেষ্টা করছেন বলে তিনিও স্বতন্ত্র একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। এ বার এলাকার টাকমাথা লোকেদের শুধু সংবর্ধনা দিয়েছেন। কিছু দিনের মধ্যে বড় করে প্রতিযোগিতা আয়োজনের ইচ্ছা রয়েছে। সেটা কার কত বিস্তৃত টাক সেই প্রতিযোগিতা কি না তার অবশ্য কোনও ব্যাখ্যা দেননি শওকত।
বুধবার ক্যানিং পূর্ব বিধানসভার দুটি অঞ্চলের প্রায় ১০০ জন মানুষকে একত্রিত করেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক এবং তাঁর সঙ্গীরা। ওই ১০০ জনের মধ্যে সাযুজ্য হল, তাঁদের প্রত্যেকের মাথায় টাক রয়েছে। তবে টাকেও ছিল বৈচিত্র। কারও একমাথা টাক, কারও কপালের দু’দিকের চুল হালকা হয়ে গিয়েছে। কারও সামনে টাক, পিছনের দিকটা ঠিকঠাক। কারও আবার কানের ধার বরাবর কিছু চুল অবশিষ্ট রয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষে সকলের মুখেই হাসি। হাতে নতুন পাঞ্জাবি আর লাল গোলাপ।
হঠাৎ এমন ‘কর্মসূচি’ কেন, তা জানাতে গিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা জানিয়েছেন, ব্লকে ব্লকে দলের তরফে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন হচ্ছে। বুধবারেও ‘টাক-সংবর্ধনা’ সেই বিজয়া সম্মিলনীর অঙ্গ। অনেকে মজা করে বলেন, টাক থাকলে টাকা হয়। আর শওকত বলেন, ‘‘যাঁদের আমরা টাকমাথার লোক বলি, এমন লোক আমাদের এলাকায় প্রচুর আছেন। এঁদের বুদ্ধি বেশি। এঁরা জ্ঞানী-বুদ্ধিজীবী। দুটো অঞ্চলের ১০০ জন মানুষকে সংবর্ধনা দিয়েছে। পরে গোটা ব্লকে এক হাজার এমন লোককে সংবর্ধনা দেব। একটা কম্পিটিশন করানোরও ইচ্ছা আছে।’’ হঠাৎ এমন ইচ্ছার কারণ? বিধায়কের জবাব, ‘‘নতুন নতুন ভাবনা উঠে আসছে। নতুন নতুন উদ্যোগ দেখা দিচ্ছে। এই দেখুন না, প্রতি বছর কলকাতার রেড রোডে পুজোর কার্নিভাল হয়। এ বার কিছু মানুষ ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ শুরু করেছেন। নতুন নতুন জিনিস উঠে আসছে। আমিও একটি নতুন উদ্যোগ নিলাম। আগামী সময়ে পুরো বিধানসভা এলাকায় এমন অনুষ্ঠান করব।’’
গোলাপ আর পাঞ্জাবির প্যাকেট হাতে বাড়ি ফিরতে ফিরতে এক প্রৌঢ় মাথায় হাত বুলোলেন। হেসে বললেন, ‘‘এর জন্য যে উপহারও মিলতে পারে কখনও কল্পনাই করতে পারিনি।’’ আর এক জন বলেন, ‘‘গোলাপ তো পেলাম। কিন্তু মাথায় গোঁজার মতো চুল যদি থাকত!’’