কোনও-মতে: এ ভাবেই চলছে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র
একটি মাত্র ঘরে গাদাগাদি করে বসে জনা পঞ্চাশ পড়ুয়া। নানা ক্লাসের পড়া এক সঙ্গেই চলে। তাতে কার মাথায় কতটুকু পড়া ঢোকে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে লাভ নেই। কারণ, স্কুলে দোতলা ভবন থাকলেও তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। শিক্ষকের সংখ্যাও কম।
কিন্তু আয়লার পর থেকে ক্রমশ হাল খারাপ হয়েছে ভবনের। এখন বেশিরভাগ ঘরে বাচ্চারা ঢোকে না ভবন ভেঙে পড়ার ভয়ে। একটি মাত্র ঘরে ঠেসেঠুসে চলছে পঠনপাঠন। এই হাল হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের ভান্ডারখালি এফপি স্কুলের।
গৌড়েশ্বর নদীর পাশে আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের মধ্যে স্কুল। ১৯৪২ সাল নাগাদ প্রতিষ্ঠিত স্কুলটিতে পড়ুয়াদের জন্য দোতলা ভবন হয় ২০০৯ সালের আগে। কিন্তু ২০০৯ সালে আয়লার তাণ্ডবে স্কুলের নীচের ঘরগুলিতে অনেক দিন ধরে জল জমে ছিল। তারপর থেকেই ক্রমশ নীচের ঘরগুলির অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে।
স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, বারান্দাযর ইটের থামের বেশিরভাগ অংশে পলেস্তারা খসে জরাজীর্ণ দশা। ঘরের দেওয়ালে পলেস্তারা কার্যত নেই। একটি ঘরেরও মেঝে হয়নি। খড় পড়ে আছে সেখানে। জানা গেল, মাঝে মধ্যে এই ঘরে গবাদি পশু রাখেন গ্রামের বাসিন্দারা। যেহেতু ঘরে দরজা-জানলা নেই, সকলের অবাধ বিচরণ। দোতলায় ওঠার সিঁড়ির পাশে গ্রিল নেই। যে কোনও মুহূর্তে বাচ্চারা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে পড়ে যেতে পারে। সিঁড়ির ঘরের চাল ভেঙে গিয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় ঝুলতে দেখা গেল। চোখে পড়ল, দোতলার মেঝেতে বড় বড় ফাটল।
স্কুল সূত্রে জানা গেল, বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্য ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এই দোতলা ভবন একেবারেই ব্যবহার করা হয় না। বাচ্চাদের এ দিকে আসতে দেওয়া হয় না। তবে আয়লার পর থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই ভবনেরই দোতলার দু’টি ঘর ব্যবহার করা হত। এখন স্কুলে প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৫০ জন ছাত্রছাত্রী আছে। সকলকে নিয়ে এক সঙ্গে ক্লাস চলে অন্য একটি ছোট্ট ঘরে। যে ঘরের একদিকে রয়েছে মিড ডে মিলের কয়েক বস্তা চাল, প্রধান শিক্ষকের অফিসের আলমারি। সেখানেই টেবিল-চেয়ার, বইখাতা-সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। পড়ুয়াদের জন্য গাদাগাদি করে ঢোকানো হয়েছে বেঞ্চ। ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের হাত-পা মেলার মতো পরিসর নেই। দম বন্ধ করা পরিস্থিতি। এই ঘরটি ২০১২ সাল নাগাদ তৈরি হয়েছিল। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া নয়না করন, শুভশ্রী মুন্ডা, জয়শ্রী মণ্ডল, তারাশঙ্কর মণ্ডলরা বলে, ‘‘পুরনো ঘরগুলোর যা অবস্থা, ওখানে বসতে ভয় করে। তাই এই ঘরে বসতে হয় সকলকে। তবে খুব সমস্যা হয় গাদাগাদি করে বসতে।’’
অভিভাবক অসিত মণ্ডল, পরিমল মণ্ডল, তপন নাথরা বলেন, ‘‘আয়লার পর থেকে সংস্কারের অভাবে ক্রমশ পুরনো ভবনের নীচের ঘর ও থাম বেহাল হয়েছে। নোনা লেগেই এই অবস্থা। দোতলা ভবনের যে কোনও অংশ যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে উদ্বেগে থাকতে হয়।’’
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অভিষেক রায় বলেন, ‘‘নতুন ভবনের খুবই প্রয়োজন। খুব সমস্যা হচ্ছে একটি ছোট্ট ঘরের মধ্যে সব ক্লাসের এক সঙ্গে পড়াতে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন আমরা দু’জন শিক্ষক আছি। আর একজন শিক্ষক হলে ভাল হয়।’’ স্থানীয় দুলদুলি পঞ্চায়েতের প্রধান চঞ্চল মণ্ডল সমস্যার কথা জানতেন না বলে দাবি করলেন। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টার আশ্বাস দেন।
স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) আলোক মহাপাত্র বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’