লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে মগরাহাট গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র
দিন পনেরো আগে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছিল গ্রামের এক যুবকের। তাঁর সংস্পর্শে আসা ১২০ জনের লালারস পরীক্ষার পরে এখনও পর্যন্ত ৫ জনের পজিটিভ মিলেছে। ধীরে ধীরে পজিটিভের সংখ্যা বাড়ায় হুঁশ ফিরছে বাসিন্দাদের। কমছে অবাধ ঘোরাঘুরিও। ওই এলাকার কিছু অংশ গণ্ডিবদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
একই এলাকায় এতজনের সংক্রমণ ছড়ানোয় বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে প্রশাসনও। মগরাহাটের বিএমওএইচ মহম্মদ গওউসুল আলম বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসে মৃত্যুর পরেই স্বাস্থ্য দফতর থেকে দু’দিন ধরে দু’টি শিবির করা হয়েছিল। তাতে ১২০ জনের লালারস সংগ্রহ করে পাঠানোর পরে এখনও পর্যন্ত মোট ৫ জনের পজিটিভ মিলেছে। এখনও সব রিপোর্ট আসেনি। গ্রামের মানুষের মধ্যে আরও কী ভাবে সচেতনতা বাড়ানো যায়, তার চেষ্টা চলছে। আরও কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ করতে মহকুমা পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’
বৃহস্পতি ও শুক্রবার মগরাহাটের ব্যাসপুর গ্রামের বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি ও ওই এলাকার মহেশপুর গ্রামের বছর বাহান্নোর এক ব্যক্তির করোনা পজিটিভ মিলেছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা আক্রান্ত যুবকের মৃত্যুর পরে চিকিৎসক দল দু’টি শিবির করে। দু’দিনের শিবিরে স্থানীয় বাসিন্দা, স্বাস্থ্যকর্মী, আশাকর্মী মিলিয়ে মোট ১২০ জনের লালারস সংগ্রহ করা হয়। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনের রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে ৫ জনের পজিটিভ মিলেছে। মৃত যুবকের তিন নাবালিকা আত্মীয়াও আছে তাদের মধ্যে। তারা অবশ্য চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বাকি দু’জন রাজারহাটের করোনা হাসপাতালে ভর্তি।
কী ভাবে সংক্রমণ হল, তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। মৃত যুবকের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই যুবক কলকাতায় রঙের কাজ করতেন। মাস দু’য়েক আগে কোনও ভাবে পড়ে গিয়ে পায়ে চোট পান। তারপর থেকে বাড়িতেই ছিলেন। দিন পনেরো আগে সর্দি-কাশি নিয়ে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মৃত্যুর পরে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ মেলে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, যুবকের হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল। গত দু’দিনে যে দু’জন পজিটিভ হয়েছেন, তাঁদের একজন শ্বাসকষ্টে ভুগতেন। অন্যজনের তেমন কোনও সমস্যা ছিল না। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ক’দিনের মধ্যে ৫ জনের পজিটিভ মেলায় কিছু মানুষের হুঁশ ফিরেছে। গ্রামে ঢোকার দু’টি রাস্তায় ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্তদের বাড়ির আশপাশের আধ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রতিদিন নিয়ম করে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামে গিয়ে খোঁজ-খবর করছেন। পুলিশের টহলদারি বেড়েছে। এ বিষয়ে নৈনান পঞ্চায়েতের প্রধান বিজন মণ্ডল বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং ব্লক প্রশাসন থেকে ওই গ্রামের খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। সচেতনতা বাড়াতে সকলকে বোঝানো হচ্ছে।’’