বাঘের পর কচ্ছপের শরীরে বসছে রেডিয়ো ট্রান্সমিটার

বেশ কয়েক বছর আগে সুন্দরবনের বাঘের গলায় রেডিয়ো কলার পরানো হয়েছিল জঙ্গলে তাদের গতিবিধি জানতে। তবে তাতে স্বাচ্ছন্দ্য হওয়ায় পরে বাঘের শরীরে লাগানো হয় এক ধরনের মাইক্রোচিপ।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:০৯
Share:

বাটাগুড় বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ। সজনেখালিতে। নিজস্ব চিত্র

বাঘের পর এবার সুন্দরবনের কচ্ছপের শরীরে রেডিয়ো ট্রান্সমিটার বসাতে চলেছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প। বাটাগুড় বাসকা বা পোড়া কাঠা নামক এক বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপের শরীরে এই রেডিয়ো ট্রান্সমিটার বসানো হবে। সুন্দরবনের নদী, খাঁড়িতে এদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানোর জন্যই এই পরিকল্পনা বলে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প সূত্রে খবর।

Advertisement

বেশ কয়েক বছর আগে সুন্দরবনের বাঘের গলায় রেডিয়ো কলার পরানো হয়েছিল জঙ্গলে তাদের গতিবিধি জানতে। তবে তাতে স্বাচ্ছন্দ্য হওয়ায় পরে বাঘের শরীরে লাগানো হয় এক ধরনের মাইক্রোচিপ। এই যন্ত্রের মাধ্যমে জঙ্গলের মধ্যে রয়্যাল বেঙ্গলের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প। এবার সেই একই যন্ত্র বসানো হবে বাটাগুড় কাসকা নামে ওই কচ্ছপের শরীরে।

বন দফতর সূত্রে খবর, বেশ কয়েক বছর আগে সুন্দরবন থেকে শুরু করে মায়নমার, থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া উপকূল পর্যন্ত এই কচ্ছপের বসতি ছিল। কিন্তু এক সময় সুন্দরবন এলাকা থেকে এরা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৯৫-৯৬ সাল নাগাদ অলিভ রিডলে বা সামুদ্রিক কাঠা প্রজাতির কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করে ফোটাতে গিয়ে, নবজাতক কচ্ছপগুলির মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে বাটাগুড় বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের সন্ধান পায় বন দফতর। তারপরই এই প্রজাতির কচ্ছপের সংরক্ষণ শুরু করে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প। সজনেখালিতে আলাদা একটি পুকুর তৈরি করে সেখানেই বেশ কিছু বছর ধরে এই কচ্ছপ সংরক্ষণ ও তার প্রজনন চলছে। ১২টি কচ্ছপ থেকে বংশবৃদ্ধি হয়ে এখন ৩৭২টি বাটাগুড় বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে ব্যঘ্র প্রকল্পের কাছে। কিছুদিন হল সজনেখালির পাশাপাশি দোবাঁকি, খাটোয়াঝুড়ি ও হরিখালিতে এদের সংরক্ষণ ও প্রজননের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।

Advertisement

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা জানান, প্রজননে সক্ষম এইরকম বেশ কিছু বাটাগুড় বাসকা প্রজাতির কচ্ছপকে সুন্দরবনের নদীতে ছেড়ে দেওয়া হবে। তাদের গতি প্রকৃতির উপর নজরদারি চালাতে মোট দশটি কচ্ছপের শরীরে বসানো হবে রেডিয়ো ট্রান্সমিটার। এর ফলে বিলুপ্তপ্রায় এই প্রজাতির কচ্ছপ সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য জানা যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর সুধীরচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘আপাতত মোট দশটি কচ্ছপের শরীরে এই রেডিয়ো ট্রান্সমিটার সিস্টেম বসানো হচ্ছে। খুব শীঘ্রই তাদের নদীতে ছাড়া হবে। আশা করছি, এই কচ্ছপ সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য জানা যাবে।’’ প্রাথমিকভাবে যে কচ্ছপগুলির বয়স কমপক্ষে ছয় বছর ও ওজন অন্তত দশ কেজি তাদেরই নদীতে ছাড়া হবে বলে জানান তিনি।

বন দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই আমেরিকা থেকে এই বিশেষ রেডিয়ো ট্রান্সমিটার লখনউতে এসে পৌঁছেছে। সেখানেই পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সহযোগী একটি সংস্থা সমগ্র প্রক্রিয়াটা তত্ত্বাবধান করছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement