আগে মিড-ডে মিলে জুটছিল মাছও। রায়দিঘির একটি স্কুলে। ফাইল চিত্র
বছর চারেক আগে গ্রামাঞ্চলে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি দূর করতে প্রশাসনের তরফে কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছিল। যে সব পঞ্চায়েত এলাকায় অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা বেশি, সেগুলি শনাক্ত করে সেখানকার স্কুলগুলিতে মাখাপিছু বরাদ্দ বাড়িয়ে ভাল মানের মিড-ডে মিল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বছর দু’য়েক সেই মতো পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছিল ছেলেমেয়েরা। করোনা পরিস্থিতি দু’বছর স্কুল বন্ধ ছিল। ফের স্কুল চালু হতে বন্ধ হয়েছে অতিরিক্ত বরাদ্দ। অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে খাবারের মান পড়ে গিয়েছে। মিড-ডে মিল খাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে ছেলেমেয়েরা। একই সঙ্গে কমেছে উপস্থিতির হার।
এমনই পরিস্থিতি রায়দিঘির মথুরাপুর-২ ব্লকের রাধাকান্তপুর পঞ্চায়েতের স্কুলগুলির।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অপুষ্টি দূর করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলিত ভাবে পদক্ষেপ করে। প্রাথমিক ভাবে সমীক্ষায় কিছু ‘অপুষ্ট’ এলাকা চিহ্নিত করা হয়। সেই এলাকায় ছোটদের মধ্যে অপুষ্টি দূর করতে হাতিয়ার করা হয় মিড ডে মিলকে। ঠিক হয়, মিড ডে মিলে এলাকার ছেলেমেয়েরা পর পর তিনদিন গোটা ডিম পাবে। সঙ্গে থাকবে আনাজ। শেষপাতে মিলবে মরসুমি তাজা ফল।
ডায়মন্ড হারবার মহকুমা এলাকায় রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের কিছু এলাকায় সমীক্ষার পরে রাধাকান্তপুর পঞ্চায়েত অপুষ্ট ও পিছিয়ে পড়া হিসেবে চিহ্নিত হয়। ওই পঞ্চায়েতের সমস্ত প্রাথমিক ও হাইস্কুলে মিড ডে মিলে পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই মতো মিড-ডে মিলের স্বাভাবিক বরাদ্দ ৭ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৩০ পয়সা করা হয়।
ওই পঞ্চায়েতে ১০টি প্রাথমিক স্কুল, ২টি হাইস্কুল ও ২টি জুনিয়র হাইস্কুল রয়েছে। সরকারি নির্দেশ মেনে মিড ডে মিলের বরাদ্দ বাড়ার পরে স্কুলগুলিতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া শুরু হয়। নতুন মেনুতে পড়ুয়াদের মধ্যেও খাওয়ার উৎসাহ বাড়ে। একই সঙ্গে বাড়ে স্কুলে উপস্থিতির হার। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, খুব অসুবিধে ছাড়া কেউই স্কুল কামাই করত না। নতুন ব্যবস্থা বছর দু’য়েক চলার পরে ২০২০ সালে লকডাউনে সমস্ত স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফের চালু হয় স্কুলগুলি। সে সময়ে প্রথম প্রায় ২০ দিন পড়ুয়াদের আগের মতোই পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু তারপর প্রশাসন থেকে জানানো হয়, অতিরিক্ত বরাদ্দ আর মিলবে না। ফিরে যেতে হবে আগের মেনুতে।
বর্তমানে ছেলেমেয়েদের পাতে জুটছে একই স্বাদের ডাল-ভাত, সাধারণ মানের আনাজ অথবা খিচুড়ি। ডিম মিলছে সপ্তাহে ১ দিন। ফলে মিড ডে মিল নিয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে ছেলেমেয়েরা। স্কুলগুলিতে কমছে উপস্থিতির হারও।
ওই এলাকায় ভদ্রপাড়া গিলেরছাট হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অজয়কুমার সর্দার বলেন, ‘‘আমার স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ছাত্রছাত্রী মিডডে মিল খায়। আগে বরাদ্দ বেশি থাকায় ভাল খাবার দেওয়া হত। ছাত্রছাত্রীরাও আনন্দ করে খেত। এখন অনেকেই টিফিনের সময়ে বাড়ি গিয়েখেয়ে আসছে।’’
ওই এলাকার ভদ্রপাড়া কয়ালেরচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জয়দেব পাইক বলেন, ‘‘আগে পুষ্টিকর খাবার মেলায় পড়ুয়াদের উপস্থিতি হার যথেষ্ট ভাল ছিল। বর্তমানে তা কমেছে।’’
এ বিষয়ে মথুরাপুর ২ বিডিও তাপসকুমার দাস বলেন, ‘‘মিড ডে মিলের খাবারের টাকা জেলা থেকে বরাদ্দ করে পাঠানো হয়। আগে ওই পঞ্চায়েতের স্কুলগুলিতে পুষ্টিকর খাবারের জন্য বাড়তি টাকা দেওয়া হত। সেই বরাদ্দ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।’’