সুন্দরবনের কুমিরমারির প্রত্যন্ত এলাকা। এই সমস্ত এলাকার পড়ুয়ারাই চিন্তায় পড়েছেন। নিজস্ব চিত্র।
বেশ কিছু দিন ধরে স্কুলে অনলাইন ক্লাস চলছে। কিন্তু স্মার্ট ফোন না থাকায় সেই ক্লাসে যোগ দিতে পারেনি নামখানা ব্লকের নদী ও সমুদ্র ঘেরা মৌসুনি দ্বীপের বাগডাঙা গ্রামের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া অনিমা। অনিমার আশা, সরকারি ট্যাব পেলে নিয়মিত ক্লাস করতে পারবে।
সমুদ্রের কাছে টালির ছাউনি দেওয়া ঘরে কোনও মতে দিনমজুর বাবা-মা ও দুই বোনের বাস। আমপানে বাড়িটি একেবারেই তছনছ হয়ে গিয়েছিল। ধার দেনা করে মেরামত হয়েছে। অনিমা বলে, “স্মার্ট ফোন কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই এতদিন ধরে অনলাইনে ক্লাস চললেও অংশ নিতে পারিনি। স্কুলের পাঠ্য বিষয় নিয়ে কী জানানো হয়েছে তা-ও জানি না। সরকার ট্যাব দেওয়ার ব্যবস্থা করলে খুবই উপকার হবে।” তবে অনিমা জানায়, বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। সমুদ্র লাগোয়া বাড়ি বলেই ঝড়ঝাপটা হলেই লোডশেডিং হয়ে যায়। আমপানের তিন মাস পরে বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছে। ততদিন হ্যারিকেনের আলোয় পড়াশোনা চলেছে।
অনিমার মতোই ট্যাব পেলে উপকৃত হবেন বলে জানিয়েছে দ্বীপ এলাকার বহু উচ্চমাধ্যামিক পড়ুয়াই। করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল খুলছে না। রাজ্যের সব স্কুলগুলিতে অনলাইনে ক্লাস চালাচ্ছেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। এ দিকে, আমপানে নদী ও সমুদ্র ঘেরা দ্বীপ এলাকার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি, পুকুর, কৃষিজমি প্রায় তছনছ হয়ে গিয়েছে। লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ফলে গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। স্কুলগুলিতে অনলাইনে উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা শুরু হলেও, অনেক অভিভাবকেরই ছেলেমেয়েদের হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। ফলে ক্লাস করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। এই পরিস্থিতিতে সব উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে ট্যাব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণায় আশার আলো দেখেছে দ্বীপ এলাকার পড়ুয়ারা।
সাগর ব্লকের হরিণবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা খানসাহেব আবাদ হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী জয়শ্রী মণ্ডল বলে, “স্মার্ট ফোন কেনার সামর্থ্য নেই। এতদিন ধরে অনলাইনে ক্লাস হলেও যোগ দিতে পারিনি। অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে না পারায় পাঠ্য বিষয়ে অনেক কিছুই অজানা রয়ে গিয়েছে।”
ওই স্কুলের কৃতী ছাত্র সুমতিনগর গ্রামের রাজনারায়ণ পাল বলে, “স্মার্ট ফোন নেই বলে ক্লাসের অনলাইন ক্লাস করতে পারি না। বাধ্য হয়ে বন্ধুদের সাহায্য নিতে হচ্ছে। ট্যাব পেলে নিয়মিত ক্লাস করার পাশাপাশি আরও অনেক কিছু জানতে পারব।” পাথরপ্রতিমা ব্লকের নদী ও সমুদ্রে ঘেরা জি প্লট পঞ্চায়েতের উত্তর সীতারামপুর গ্রামের সোমাশ্রী দাস এ বার সীতারামপুর জি প্লট মিলন বিদ্যানিকেতন থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। ট্যাব পেলে পড়াশোনায় সুবিধা হবে বলে জানায় সেও। পাথরপ্রতিমা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কুন্তল চক্রবর্তী বলেন, “এই এলাকায় প্রায় ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৮টি দ্বীপ এলাকা রয়েছে। কলেজের প্রায় ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ওই এলাকা থেকে আসেন। সকলের স্মার্ট ফোন কেনার সামর্থ্য নেই। ফলে ওই সমস্ত ছাত্রছাত্রী অনলাইনে পড়াশনায় যোগ দিতে পারেন না। ছাত্রছাত্রীরা ট্যাব পেলে খুব ভাল হয়।”