ছবি: সংগৃহীত।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে বাগদার চন্দন মণ্ডলের বাড়িতে ইতিমধ্যেই তল্লাশি চালিয়েছেন সিবিআই এবং ইডির কর্তারা। শুক্রবার আদালতে চন্দন জানিয়েছেন, তিনি চাকরি দেওয়ার নাম করে কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। কাউকেচাকরি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর নেই।
এই পরিস্থিতিতে চাকরির আশায় টাকা দেওয়া অনেকেই ভেঙে পড়েছেন। এতদিন তাঁরা আশায় ছিলেন, চাকরি না পেলেও টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু এখন আর সে আশা দেখছেন না তাঁরা। এঁদেরই একজন বাগদার বাসিন্দা নির্মল মণ্ডল (নাম পরিবর্তিত)। তিনি জানিয়েছেন, স্কুলে চাকরির আশায় চন্দনের এক এজেন্টের কাছে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। মিলন বৈদ্য (নাম পরিবর্তিত) নামে এক যুবক জানিয়েছেন, তিনিও চন্দনের এক এজেন্টের হাতে ১২ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন।
দু’জনের কেউই চাকরি পাননি। টাকাও ফেরত পাননি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই যুবকের পরিবার আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল। তাঁরা এখন চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। এ ব্যাপারে অভিযোগ করে তাঁরা আর কোনও ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে চাইছেন না। বেশিরভাগ চাকরিপ্রার্থীই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। পুলিশে অভিযোগও করতে চাইছেন না কেউই।
তবে বাগদার সাধারণ মানুষ চাইছেন, যারা টাকা দিয়েও চাকরি পাননি, তাঁরা মুখ খুলুন। কারণ, চাকরি বা টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আর নেই। অভিযোগ, অনেককেই চন্দন টাকার বিনিময়ে প্রাথমিকে শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দিয়েছে। গ্রামবাসীরা জানালেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চাকরিপ্রার্থীরা তার বাড়িতে টাকার ঝুলি নিয়ে লাইন দিতেন। কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দিতে না পারলে তিনি নাকি সেই টাকা ফিরিয়েও দিতেন। তবে শেষদিকে অনেকের কাছ থেকে টাকানিয়েও চাকরি দিতে পারেনি বলে অভিযোগ।
আদালতে চন্দনের বক্তব্য শুনে অবাক বাগদার মানুষ। এক বাসিন্দার কথায়, “আমরা চোখের সামনে যা দেখেছিলাম, তা হলে সেই ঘটনাগুলি কী ছিল? কী করে একটা মানুষ এমন ডাহা মিথ্যে বলতে পারেন ভাবতেই পারছি না।”
রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি থেকে প্রায় ২১ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বাগদার অনেকেরই মনে পড়ছে সেই সব ঘটনা। গ্রামের অনেকে জানান, কয়েক বছর আগে বাগদা থেকে গাড়ির ডিকিতে প্রায়শই বস্তা তুলতে দেখেছেন। কলকাতায় যাওয়ার সময়ে পথে নাকি একাধিকবার গাড়ি বদল করা হতো। অনেক মনে করেন, চাকরিপ্রার্থীদের কাঁচা টাকা এ ভাবেই নিয়ে যাওয়া হত। বেশির ভাগটাই যেত ‘উপরমহলে’। সে মহলের হদিশ জানেন না গ্রামের মানুষ। এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, এমনি সময়ে এলাকায় স্কুটি নিয়ে ঘুরলেও সেই সময়ে গাড়িতেই যেতেন চন্দন। সঙ্গে থাকত বিশ্বস্ত কয়েকজন। কারও কারও দাবি, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল চন্দনের।
চন্দনের প্রতিবেশীরা জানালেন, অনেক দিন থেকেই চন্দনকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। শনিবার দুপুরে তার বাড়িতে গিয়ে চন্দনের খোঁজ করা হলে, ঘরের ভিতর থেকে একমহিলা জানান, তাঁরা কোনও কথা বলবেন না।