ফাইল চিত্র।
আমপানের পরে ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতি-স্বজনপোষণের বহু অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছিল শাসক দল। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে ইয়াসের পরে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ প্রকল্পে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে রাজ্য সরকার।
যদিও সেই নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন হাসনাবাদের ভবানীপুর ১ পঞ্চায়েতের শুলকুনি গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, মঙ্গলবার বিকেলে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ প্রকল্পে জমা পড়া আবেদনের তদন্তে গ্রামে এসেছিলেন সরকারি প্রতিনিধিরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য পিঙ্কি সাউ এবং তাঁর স্বামী মনোহর। এই নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বচসা শুরু হলে তদন্তের কাজে ইতি টেনে ফিরে যান সরকারি কর্মীরা। রাতে দু’দলের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করে। বিডিও (হাসনাবাদ) মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সরকারি কর্মীরা গ্রামে যাওয়ার পরে অনেকেই তাঁদের কাছে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে কে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য, কে বিজেপির নেতা, তা দেখা সম্ভব নয়। প্রশাসনের কর্মীরা কাউকে ডাকেননি।’’ মহকুমাশাসক (বসিরহাট) মৌসম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম মোতাবেক তদন্তের কাজে কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলবে না। আধিকারিকেরা সেই নির্দেশ মেনেই কাজ করছেন। শুলকুনিতে কী ঘটেছে তা জেনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পিঙ্কি ও তাঁর স্বামীর দাবি, তাঁরা তদন্তকারীদের সঙ্গে ছিলেন না।
আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে দুই ২৪ পরগনায় দুর্নীতির ভুরিভুরি অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে। গত বিধানসভা নির্বাচনে দুর্নীতিকে প্রচারের হাতিয়ার করেছিল বিরোধীরা। অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার এ বার সিদ্ধান্ত নেয়, ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বিলির প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন কেবলমাত্র সরকারি আধিকারিকেরা। আবেদনপত্র গ্রহণ করা থেকে শুরু করে ক্ষতিপূরণ বিলি— কোনও কিছুতেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। নির্দেশ মোতাবেক ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বা সম্পত্তির হাল হকিকত দেখতে গ্রামে-গ্রামে তদন্তে যাচ্ছেন সরকারি কর্মীরা। ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তির ছবি তুলে আপলোড করা হচ্ছে অ্যাপে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বিকেলে শুলকুনি গ্রামে গিয়েছিলেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। বিজেপি সমর্থক বলে পরিচিত কয়েকজন গ্রামবাসী সরকারি কর্মীদের সঙ্গে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ও তাঁর স্বামীকে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের মধ্যে সন্তোষ সাউ নামে এক গ্রামবাসী সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, তদন্ত করে কোনও লাভ হবে না। কারণ, বিজেপি কর্মী হওয়ায় তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন না।
এই মন্তব্য ঘিরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, সন্তোষের মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী। তাঁকে বিজেপি সমর্থকেরা নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ। উত্তেজনা ছড়ালে তদন্তের কাজ বন্ধ রেখে চলে আসেন ব্লক প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পুলিশের হস্তক্ষেপে তখনকার মতো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও রাতে সংঘর্ষে জড়ায় দু’দলের সমর্থকেরা। পুলিশ সন্তোষকে গ্রেফতার করেছে। আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে বুধবার তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিজেপি করি বলে সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা পাই না। তাই বলেছিলাম, তদন্ত করে লাভ নেই। সামান্য বিষয় নিয়ে তৃণমূলের কর্মীরা আমাদের উপরে হামলা চালায়।’’
বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তারক ঘোষের বক্তব্য, ‘‘সরকারের সিদ্ধান্ত, ক্ষতিপূরণ দেওয়া সংক্রান্ত কোনও কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রশাসন বরদাস্ত করবে না। তা সত্ত্বেও সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য এবং তাঁর স্বামীকে দেখা যায়। সে কারণে আমাদের দলের কর্মীদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’’
পিঙ্কি সাউ এবং তাঁর স্বামীর দাবি, ‘‘ওই গ্রামেই আমাদের বাড়ি। সরকারি কর্মীদের সঙ্গে আমরা ছিলাম না। তাঁদের উদ্দেশে আপত্তিকর মন্তব্য করা হচ্ছে দেখে প্রতিবাদ করা হয়েছে। সরকারি তদন্তে যুক্ত থাকার থাকার প্রশ্নই উঠছে না। গোটা ঘটনা পুলিশকে জানিয়েছি।’’ পিঙ্কিদের যুক্তিকেই সমর্থন জানিয়েছেন হিঙ্গলগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা সরকারি কর্মীদের সঙ্গে ছিলেন না।’’