তৃণমূল কর্মীর হাতে চড় খেলেন স্থানীয় বাসিন্দা সাগর বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র।
দত্তপুকুরের ‘দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি’তে অভিযোগ জানাতে গিয়ে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীর কাছ থেকে কষিয়ে থাপ্পড় খেতে হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা সাগর বিশ্বাসকে। তাঁর দাবি, তিনি স্থানীয় মন্দির কমিটির সদস্য। আর সেই মন্দির সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে কথা বলতে গিয়েই তৃণমূল কর্মীদের কাছে আক্রান্ত হয়েছে তাঁকে। সাগরের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হতেও শুরু হয়েছে। কিন্তু ‘দিদির দূতের’ কাছে ঠিক কী অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন তিনি? পাশাপাশি, তাঁর পরিচয় প্রকাশ্যে এলেও প্রশ্ন তোলা শুরু হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার সকালে। সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধা কথা শুনতে দলনেত্রীর নির্দেশে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি’ শুরু হয়েছে সারা বাংলা জুড়ে। সেই কর্মসূচিতেই ‘দিদির দূত’ হয়ে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থানার অন্তর্গত ইছাপুর নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের সাইবনা এলাকায় পৌঁছেছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। গ্রামের রাস্তা, পানীয় জল এবং আবাস যোজনায় ঘর পাওয়ার সমস্যা নিয়ে গ্রামবাসীদের অনুযোগ-অভিযোগের কথা শুনছিলেন মন্ত্রী রথীন। সেখানেই নিজেদের কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় একটি মন্দির কমিটির কয়েক জন সদস্য। সেই কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সাগরও। অভিযোগ, নিজেদের দাবি নিয়ে আলোচনা করার সময় হঠাৎই সাগরের উপর চড়াও হন স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী। জনসমক্ষে চড় মেরে ধাক্কা দিতে দিতে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এর পরই সরব হন সাগর। মন্ত্রীর কাছে গিয়ে অভিযোগও জানান।
সাগরের কথায়, ‘‘আমি স্থানীয় মন্দির কমিটির এক জন সদস্য। মন্ত্রী আসবেন শুনে কমিটির পক্ষ থেকে মন্দির সংক্রান্ত কয়েকটি কথা বলতে আমাকে পাঠানো হয়েছিল। মন্দির কমিটির অন্য সদস্যরাও ওখানে উপস্থিত ছিলেন। আমরা মূলত মন্দিরের সামনের রাস্তা এবং নাটমন্দির নিয়ে তৈরি হওয়া কিছু সমস্যার কথা বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে কোনও কারণ ছাড়াই আমাকে মারধর করা হয়।’’
থাপ্পড় খাওয়া নিয়ে রথীনের সঙ্গেও দেখা করে সাগর বলেন, ‘‘গতকাল মন্দির কমিটির তরফে আমরা বসেছিলাম। আলোচনা হয়েছিল যে, এখানে রাস্তা খারাপ, সেই বিষয় নিয়ে বলা হবে। কিন্তু, হঠাৎ করে আমার উপর চড়াও হল কেন স্যর? এটা আপনার কাছে আমার প্রশ্ন।’’
মন্ত্রীর দাবি, যখন পুরো ঘটনাটি ঘটছে তখন তিনি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকলেও সাগরকে চড় খেতে তিনি দেখেননি। তাঁর দাবি, যা হয়েছে তা ‘ব্যক্তিগত সমস্যা’-র কারণে হয়েছে এবং এই বিষয়ে তিনি মাথা ঘামাবেন না। যদিও ঘটনা জানার পর সাগরের কাছে ‘দুঃখিত’ বলে ক্ষমা চেয়েছেন রথীন।
মন্ত্রী বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত গন্ডগোলে আমি মাথা গলাব না। ওদের ক্লাবের কী গন্ডগোল রয়েছে, তা আমি জানি না। চড় মারতেও আমি দেখিনি। যদি এটা হয়ে থাকে তা হলে সেটা ঠিক হয়নি। ‘দিদির সুরক্ষা কবচে’ যা যা রয়েছে, তা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু কেউ কেউ ব্যক্তিগত অ্যাজেন্ডা নিয়ে এসেছে। অভিযোগ-অনুযোগ জানানোর আরও অনেক ব্যবস্থা আছে। কিন্তু খেলার মাঠে কে গাছ কেটেছে, সেই সমস্যার কথা আজকে আসবে কেন? এটা ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি সেই কথা কেন শুনব?’’
পাশাপাশি মন্ত্রীর বক্তব্য, তিনি শুনেছেন যে বিরোধী গেরুয়া শিবিরের কর্মী সাগর। তিনি বলেন, ‘‘যিনি মার খেয়েছেন, শুনলাম তিনি বিজেপির মণ্ডল কমিটির সদস্য।’’
যে তৃণমূল কর্মী সাগরকে মেরেছেন তাঁর সম্পর্কে এবং কেন গায়ে হাত তোলা হয়েছে, সেই বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলেও মন্ত্রী রথীন জানিয়েছেন।