গ্রে প্লোভারের সঙ্গে দু’টি নর্ডম্যান’স গ্রিন শ্যাঙ্ক। ছবি: মিলন মণ্ডল।
পশ্চিমবঙ্গের পাখি-চর্চার ইতিহাসে নতুন অবদান রাখল সুন্দরবনের লোথিয়ান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। সৌজন্যে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) মিলন মণ্ডল। সপ্তাহ কয়েক আগে বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপ থেকে পাঁচটি বিপন্ন প্রজাতির নর্ডম্যান’স গ্রিন শ্যাঙ্কের সন্ধান পেয়েছেন তিনি। তার মধ্যে তিনটিকে ক্যামেরাবন্দিও করেছেন। এই প্রথম বার পশ্চিমবঙ্গে দেখা গেল এই প্রজাতিটিকে।
রাশিয়ার পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল থেকে শীতের পরিযায়ী হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আসে নর্ডম্যান’স গ্রিন শ্যাঙ্কেরা। প্রায় প্রতি শীতেই বাংলাদেশের কক্সবাজার সন্নিহিত উপকূল এলাকায় দেখা মেলে এদের কয়েকটিকে। কিন্তু ভারতে এদের দেখা প্রায় মেলেনি। পাখি বিশারদ শান্তনু মান্না জানিয়েছেন, ২০২০ সালে মহারাষ্ট্রে দু’টি পাখি ক্যামেরাবন্দি হয়েছিল। তার আগে ভারতে এদের সচিত্র উপস্থিতি নথিবদ্ধ হয়নি। তবে ব্রিটিশ পক্ষীবিদ ফ্রাঙ্ক ফিন তাঁর ১৯০৬ সালে লেখা ‘হাউ টু নো ইন্ডিয়ান ওয়েডার্স’ বইয়ে কলকাতার পাখির বাজারে এদের একটিকে বিক্রি হতে দেখেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কখনওই মুক্ত প্রকৃতিতে সন্ধান মেলেনি নর্ডম্যান’স গ্রিন শ্যাঙ্কের।
শুধু বিরল এই প্রজাতিটি নয়, সামগ্রিক ভাবে গত দু’বছরে সুন্দরবনের লোথিয়ান দ্বীপ এবং লাগোয়া ভগবৎপুরের চরে স্থানীয় এবং পরিযায়ী জলের পাখির সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। বন দফতরের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং সুরক্ষা কর্মসূচি এই এলাকাকে পরিযায়ী অতিথিদের নিরাপদ গন্তব্যস্থল করে তুলেছে বলে মনে করেন পাখি পর্যবেক্ষকরা।
বন দফতর সূত্রের খবর, চলতি শীতে লোথিয়ান এবং ভগবৎপুরে বিপুল সংখ্যক হাঁস এবং চরের পাখি (ওয়াডার্স)-র সন্ধান মিলেছে। সেই তালিকায় প্রায় ৪০০টি কমন শেলডাক প্রজাতির হাঁসের পাশাপাশি ৭০০-র বেশি হুইমব্রেল, প্রায় ৪০০ ইউরেশিয়ান কারলিউ প্রজাতির ওয়াডার্স-এর উপস্থিতি নথিভুক্ত হয়েছে। রয়েছে, গ্রেটার স্যান্ড প্লোভার, লেসার স্যান্ড প্লোভার, গ্রে প্লোভার, কমন রেডশ্যাঙ্ক, ডানলিন, টেরেক স্যান্ডপাইপার, লিটল স্টিন্ট, এবং নর্ডম্যান’স গ্রিন শ্যাঙ্কের ‘আত্মীয়’ কমন গ্রিন শ্যাঙ্করা।
ডিএফও জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকায় পরিযায়ী পাখিদের বেশ কয়েকটি আবাসক্ষেত্র চিহ্নিত করেছেন তাঁরা। লোথিয়ান, জম্বুদ্বীপ এবং ঠাকুরানের চর রয়েছে সেই তালিকায়। বছর দু’য়েক আগে ভগবৎপুরের (লোথিয়ান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য) রেঞ্জ অফিসারের দায়িত্ব নিয়েছে তন্ময় চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, শীতের গোড়া থেকেই বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী বালিখাল এবং সপ্তমুখীর চরগুলিতে পরিযায়ী পাখিদের সুরক্ষার জন্য নিয়মিত টহলদারি করেন বনকর্মীরা। ভগবৎপুরের জনবসতি লাগোয়া চরগুলিতেও চলে নিয়মিত নজরদারি।