এই বাড়ির মালিকেরও নাম রয়েছে তালিকায়। বাগদায় তোলা নিজস্ব চিত্র
রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে আবাস যোজনার তালিকা খতিয়ে দেখার কাজ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছেন পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের কর্তারা।
বাগদা থানার ওসি উৎপল সাহা বাগদা ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে আবাস যোজনার তালিকায় নাম থাকা ৪০০ বাড়িতে ‘সুপার চেকিং’ করেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ৪০০ নামের মধ্যে ১০০ জন অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন। পুলিশের তরফে বিডিওর কাছে ওই ১০০ জনের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বাগদা ব্লকে কমবেশি প্রায় ২৩ হাজার মানুষের নাম আছে তালিকায়। বিরোধীদের দাবি, সুপার চেকিংয়ে ৪০০ জনের মধ্যে যদি ১০০ জন অযোগ্য হয়, তা হলে ২৩ হাজারের তালিকায় কতটা জল রয়েছে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
দিন কয়েক আগে উৎপল সুপার চেকিংয়ে গিয়ে জানতে পারেন দোতলা পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাস যোজনার ঘরের তালিকায় নাম উঠেছিল পারকৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা বুলু কীর্তনিয়ার। তিনি বাড়িতে গিয়ে দেখেন, দোতলা বাড়ি ছাড়াও বুলুর রেফ্রিজারেটর, মোটরবাইক ও তিন-চাকা গাড়ি রয়েছে। বুলুর দাবি, ‘‘তালিকায় আমার নাম কী করে এল, জানা নেই।’’
বাগদা ব্লকের আষাঢ়ু পঞ্চায়েতের এক সুপারভাইজারের নামও তালিকায় উঠেছে বলে অভিযোগ। ওই পঞ্চায়েতেই সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূলের এক যুব নেতা পাকাঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে গরিব মানুষদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, অভিযোগের তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ দিকে তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। ইতিমধ্যেই মালিপোতা গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিসে গিয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন তাঁরা। স্থানীয় সূত্রে খবর, শাসক দলের একাংশের নেতা, জনপ্রতিনিধিরাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে সমীক্ষা করে আবাস যোজনার তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে তালিকায় নাম থাকা অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবে পাকাবাড়ি করেছেন। অথবা বাড়ির কোনও সদস্য সরকারি চাকরি পেয়েছেন। কারও আবার পাকাবাড়ি নেই, কিন্তু বাড়ির সদস্য বাইক কিনেছেন। এমন পরিবারের নাম তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে।
এদিকে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সম্পূর্ণ তালিকা বাতিল করার দাবি তুলেছে বিজেপি। বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিজেপির অমৃতলাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘২০১৮ সালে আবাস যোজনায় প্রাপকদের যে তালিকা তৈরি হয়েছিল তা সম্পূর্ণ ভুলে ভরা। ত্রিপলের নীচে থাকেন এমন বহু গরিব মানুষের নাম ওই তালিকায় নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই তালিকা পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। এটি স্বজনপোষণের তালিকা। নতুন করে সমীক্ষা করে স্বচ্ছ তালিকা তৈরি করা হোক।’’ বিজেপির সূত্রে জানানো হয়েছে, আবাস যোজনার প্রকৃত গরিব মানুষদের পাকা বাড়ি দেওয়া এবং তালিকা বাতিল করার দাবি জানিয়ে ১৫ ডিসেম্বর বাগদা বিডিওর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
সিপিএমের বাগদা ব্লক এরিয়া কমিটির সদস্য সুভাস মিস্ত্রি বলেন, ‘‘প্রকৃত গরিব মানুষ যাঁরা টাকা দিতে বা তদ্বির করতে পারেন না, তাঁদের নাম আবাস যোজনার তালিকায় নেই। অথচ যাঁদের দোতলা বাড়ি-বাইক আছে, তাঁদের নাম তালিকায় বেশি রয়েছে। আমাদের দাবি স্বচ্ছ তালিকা তৈরি করা হোক। এ বিষয়ে আমরা বিডিওর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছি।’’
বাগদা ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি প্রবীর কীর্তিনিয়া বলেন, ‘‘ আবাস যোজনায় নামের তালিকা অস্বচ্ছতায় ভরা। এই তালিকা বাতিল করতে হবে।’’
তালিকা যে সঠিক ভাবে তৈরি হয়নি তা মানছেন বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের গোপা রায়। তিনি বলেন, ‘‘২০১৮ সালে যখন তালিকা তৈরি হয়েছিল, তখন পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজের সুপারভাইজারদের দিয়ে সমীক্ষা করানো হয়। অনেক গরিব মানুষের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বর্তমান তালিকায় থাকা অনেকের বিরুদ্ধে আমার কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। তা খতিয়ে দেখতে বিডিওর কাছে পাঠানো হচ্ছে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ বাগদার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা চায় না গরিব মানুষ পাকাবাড়ি পান। গঠনমূলক কোনও কাজে ওরা থাকে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত করে স্বচ্ছ তালিকা তৈরি হচ্ছে।’’
এই বিষয়ে বাগদার বিডিও সৌমেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়কে কয়েক বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।