কে বেশি কাছের, প্রমাণের চেষ্টায় মরিয়া দু’পক্ষই
Matua

মতুয়া ধর্ম মহামেলা ঘিরে শুরু রাজনীতির চাপানউতোর

বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় জাহাজ ও অভ্যন্তরীণ জলপথমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৮:৩৫
Share:

ভক্তি: মতুয়া ধর্মমেলায় ভক্তেরা। শনিবার, ঠাকুরনগরে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

রাজনীতির রং বহুকালই লেগেছে মতুয়াদের ধর্ম মহামেলায়। যে দু’টি সংগঠন মেলার সঙ্গে যুক্ত, তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন সুস্পষ্ট। এ বার প্রধানমন্ত্রীর টুইট, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মেলা-সফর ঘিরে সেই তরজাই জোরদার হল।

Advertisement

মতুয়া ধর্ম মহামেলা উপলক্ষে শুক্রবার টুইট-বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় জাহাজ ও অভ্যন্তরীণ জলপথমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। এই বিষয়গুলির উল্লেখ করে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর শনিবার বলেন, ‘‘কেন্দ্রের পক্ষ ধর্ম মহামেলা উপলক্ষে ৮টি এক্সপ্রেস ট্রেন, ৩০টির বেশি লোকাল ট্রেন এবং ১২০০ যাত্রীর একটি জাহাজ আন্দামান থেকে দেওয়া হয়েছ মতুয়া ভক্তদের মেলায় আসার জন্য।’’ এই প্রসঙ্গেই সাম্প্রতিক একটি ঘটনা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘অপদার্থ’ বলে কটূক্তি করেন তিনি। বলেন, ‘‘অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রী মতুয়াদের আরাধ্য হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম ব্যঙ্গাত্মক ভাবে উচ্চারণ করে, তাঁদের অপমান করে আনন্দে নেচে বেড়াচ্ছেন!’’

এ বার মেলায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রচুর পুলিশ অফিসার ও পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। তা নিয়ে শান্তনুর দাবি, কংগ্রেস-বাম আমলে মেলায় পুলিশ-প্রশাসনের কোনও ভূমিকা ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল সরকার বাধ্য হয়েছে পুলিশ দিতে। কিন্তু মহামেলায় কখনও পুলিশের প্রয়োজন হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। পুলিশ মেলায় অসুবিধা সৃষ্টি করে (ডিস্টার্ব) করে। ঠাকুরবাড়ি ও মতুয়াদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে।’’ ৪০ লক্ষ মতুয়া ভক্তকে পুলিশের পক্ষে সামলানো সম্ভব নয বলে মনে করেন তিনি।

Advertisement

শান্তনুর বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ মমতা ঠাকুর নানা প্রকল্পের ফিরিস্তি দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যে কামনা সাগরে সকলে পুণ্যস্নান সারছেন, সেই পুকুরটিও মুখ্যমন্ত্রী বাঁধিয়ে দিয়েছেন। মতুয়া উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেছেন। হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন। প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের নামে সরকারি কলেজ করেছেন। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর অবদান বলে শেষ করা যাবে না।’’

মমতা ঠাকুরের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে ঠাকুরবাড়িতে এলেও তাঁরা মতুয়াদের জন্য কী দিয়েছেন? কেন হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম জাতীয় ইতিহাসের পাতায় উঠবে না, কেন হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে জাতীয় ছুটি ঘোষণা হবে না— এ প্রশ্ন তোলেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ।

এ দিন দুপুরে কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী ঠাকুরবাড়িতে এসে হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে প্রণাম করেন। কামনা সাগরের জল মাথায় দেন। বলেন, ‘‘ঠাকুরবাড়ির পবিত্র ভূমিতে আসতে পেরে আমি শান্তনু ঠাকুরের কাছে কৃতজ্ঞ। এই মেলা এখন একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে পরিণত হয়েছে।’’ পর্যটনের দিক থেকেও যার গুরুত্ব আছে বলে মনে করেন মন্ত্রী। আগামী দিনে মতুয়া ধর্ম মহামেলা বিশ্বের সব থেকে বড় এবং আর্কষণীয় মেলা হতে চলেছে বলে মনে করেন তিনি। কেন্দ্রও এ বিষয়ে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে মমতা ঠাকুর পরে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়েছেন। এটা রাজনৈতিক বক্তৃতার জায়গা নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement