Murder

খুনের ছক কষা হয় আগেই

অভিযুক্তদের বাড়ির লোকজন এলাকাছাড়া। মৃতের পরিবার দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২১ ০৭:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

খুনের মতো অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ ধরেছে বছর চোদ্দ ও সতেরোর দুই কিশোরকে। ঘটনার জেরে উত্তাল হয়েছে তাদের এলাকা। তবু দুই কিশোর কার্যত ‘ভাবলেশহীন’। আচরণে কোনও ফারাক নেই। থানায় থাকার সময় স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া করেছে তারা। রাতে ঘুমিয়েছে অন্য দিনের মতোই। সব দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত পুলিশকর্মীরা।

Advertisement

সোমবার রাতে জয়নগরের বকুলতলায় রেললাইনের কাছে মন্দিরবাজারের দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের মৌজপুর গ্রামের এক কিশোরকে শ্বাসরোধ করে খুন করার অভিযোগ ওঠে তার তিন বন্ধুর বিরুদ্ধে। তার মুখ ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়। দু’জন ধরা পড়লেও ফেরার তৃতীয় জন। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা হয়েছে। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, দিন কুড়ি আগে বন্ধুকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল তিন অভিযুক্ত। বৃহস্পতিবার জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড ধৃত দুই অভিযুক্তকে হোমে পাঠায়।

পুলিশের দাবি, খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে ধৃত দুই বালক। জেরার প্রথম দিকে অপরাধের কথা তারা স্বীকার করেনি। একেক বার একেক রকম কথা বলে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল তারা। পরে অবশ্য দোষ স্বীকার করে নেয় দু’জন।

Advertisement

কী ঘটেছিল সে দিন?

তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সোমবার সন্ধ্যায় ওই কিশোর অনলাইনে ‘ফ্রি-ফায়ার’ খেলার জন্য পড়শি এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিল। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল দিদির স্মার্ট ফোন। সেই রাতে ওই বন্ধু তাকে নিয়ে পেয়ারা পাড়তে যায় বাড়ির কাছে রেল লাইন লাগোয়া একটি জায়গায়। সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও দুই বন্ধু। ওই বালকের দুই হাত চেপে ধরে দু’জন। তৃতীয় জন তার গলা টিপে ধরে। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে বালক। তিন অভিযুক্তের এক জন ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। অন্য দু’জন বালকের মুখ ইট দিয়ে থেঁতলে দেয়। তার পরে ঝোপের মধ্যে দেহ ফেলে তার উপরে খড় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে যে যার বাড়ি ফিরে যায় তারা। সেই সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই, ওই এলাকার বাসিন্দারা কিছু
টের পাননি।

মঙ্গলবার সকালে মন্দিরবাজার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি হয়। বিকেলে উদ্ধার হয় বালকের দেহ। তার পরিবারেরর দাবি, ওই কিশোর সোমবার সন্ধ্যায় পড়শি এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিল। তার পরে জনতা সেই বাড়িতে হামলা চালায়। ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ মৃতের এক বন্ধুকে জেরা করে। সে অভিযোগ স্বীকার করে জানায়, ঘটনায় আরও দু’জন যুক্ত। তাদের এক জনকে ধরতে পারে পুলিশ। তৃতীয় জন পালিয়ে যায়। তদন্তকারীরা জানান, ধৃতদের জেরা করেই আস্তে আস্তে গোটা ঘটনাক্রম স্পষ্ট হয়। পরে তাদের থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, অনলাইনে গেম খেলা নিয়ে বিবাদ থাকলেও সেটি খুনের একমাত্র কারণ নয়। তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। মাঠে খেলতে গেলে ওই বালককে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছিল না তার বাকি তিন বন্ধু। পুলিশের দাবি, দিন কুড়ি আগে অভিযুক্তরা খুনের ফন্দি আঁটে।

মন্দিরবাজার থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘ধৃত কিশোরদের আচরণ এবং কথাবার্তায় এক বারও মনে হয়নি, তারা খুনের মতো জঘন্য অপরাধ করেছে। উল্টে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে তদন্তকে অন্য পথে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিল। হেফাজতে থাকাকালীন স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া করেছে। রাতে ঘুমিয়েছে।’’

খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে অভিযুক্ত এক কিশোরের বাড়িতে স্থানীয় বাসিন্দারা হামলা চালায়। তখন সে ছাদে উঠে লুকিয়ে পড়ে। তাকে ধরে পুলিশের সামনে হাজির করেন গ্রামবাসী। আর এক অভিযুক্ত তখন নিজের বাড়িতেই ছিল। খুনের জেরে এলাকায় গোলমাল হচ্ছে দেখেও পালানোর চেষ্টা করেনি। ওই ঘটনার পর থেকে তপ্ত এলাকা। এ দিনও সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। অভিযুক্তদের বাড়ির লোকজন এলাকাছাড়া। মৃতের পরিবার দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement