ছায়াঘেরা: পথের এই সৌন্দর্য আর থাকবে কি, প্রশ্ন
২০১৬ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, মামলা-মোকদ্দমার দীর্ঘ অধ্যায়ের একপ্রকার অবসান হল বলা যায়। যশোর রোডের মোট পাঁচটি রেল ক্রসিং এ রোড ওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য ৩৫৬টি শতাব্দী প্ৰাচীন গাছ কাটতে বাধা নেই বলে জানিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপরে মনে হচ্ছে অচিরেই যশোর রোড সম্প্রসারণের প্রকল্প শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে প্রায় ৪৫০০ গাছ কাটা পড়বে। প্রকৃতি, পরিবেশের তোয়াক্কা না করে বিকাশের যে বুলডোজার বিশ্বের বেশির ভাগ রাষ্ট্রই আত্মস্থ করেছে, তার বিরুদ্ধে অসম লড়াইয়ের ইতিহাসে যশোর রোডের নামও লেখা থাকবে।
গাছ বাঁচাতে এপিডিআর-সহ বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন এবং কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্রছাত্রীর আন্দোলনের কথাও মানুষ নিশ্চয়ই মনে রাখবেন। যশোর রোডের গাছ বাঁচানোর লড়াই কোনও বিচ্ছিন্ন লড়াই নয়। তা আসলে দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার বৃহত্তর নীতি-আদর্শের লড়াই। একটি বিশেষ মামলার রায় যতই বিপক্ষে যাক না কেন, এই জাতীয় লড়াই-আন্দোলন জারি থাকবে। পরিবেশ রক্ষা নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা এই রায়কে হার হিসাবে যেন না দেখেন।
আপাতত ৩৫৬টি শতাব্দী প্রাচীন গাছ কাটা হবে এমন একটি জেলায়, যেখানে ‘গ্রিন কভারেজ’ বা সবুজায়ন মাত্র ১.৫ শতাংশের কাছাকাছি। জানি, এ প্রসঙ্গে আর এক বার সরকারি উদ্যোগে বিকল্প বৃক্ষরোপণের গল্প শোনানো হবে। তা যে আদতে ভাঁওতাবাজি, তা কারও বাকি নেই।
যত দূর জানি, ১৭৭০ সালে বাংলায় খরা, অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে মেহগনি-সহ বেশ কিছু গাছের বীজ অন্য দেশ থেকে এনে গোটা বাংলায় রোপণ করা হয়েছিল। সেই ইতিহাসেরই সাক্ষী যশোর রোডের ধারের গাছগুলি। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, প্রাণী, কিট-পতঙ্গ, উদ্ভিদের সমন্বয়ে এক দীর্ঘ বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠেছে এই গাছগুলিকে কেন্দ্র করে। পথে দু’ধারের জনপদের সঙ্গে নানা আত্মিক সম্পর্ক তাদের।
সব কিছু হয় তো ধুয়েমুছে যাবে কিছু দিনের মধ্যেই।
(বৃক্ষপ্রেমী, মানবাধিকার কর্মী)