বিস্ফোরণের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িঘর। — নিজস্ব চিত্র।
উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের মোচপোলে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে বেশ কয়েক জনের মৃত্যুর আশঙ্কা। বিস্ফোরণের পরেই ক্ষোভের বাঁধ ভাঙে স্থানীয়দের। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের ‘সহযোগিতা’য় এলাকায় রমরমিয়ে চলছে বাজি কারখানা। এতে পুলিশের পাশাপাশি ‘যুক্ত’ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও। তাঁদের দাবি, শুধু একটি বাড়িতেই নয়, এলাকার একাধিক বাড়িতে প্রশাসনের ‘যোগসাজশ’-এ রমরমিয়ে চলছে অবৈধ বাজির কারবার।
রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে দত্তপুকুরের ওই অঞ্চল। বিস্ফোরণের খবর পেয়ে অকুস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের ‘সবুজ সঙ্কেত’ পেয়েই রমরমিয়ে চলছিল অবৈধ বাজির কারবার।
স্থানীয় বাসিন্দারা শামসুল নামে এক ব্যক্তির বাড়ি ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। তাঁদের দাবি, শামসুল নামে ওই ব্যক্তিই বেআইনি বাজির কারবার চালাচ্ছিলেন। অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে প্রশাসনের কর্তাদের। যদিও এখনও পর্যন্ত এ সম্পর্কে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি প্রশাসনের। স্থানীয়রা বলছেন, ওই পাড়ায় একাধিক বাড়িতে বেআইনি ভাবে বাজি তৈরির কাজ চলত শামসুলের নেতৃত্বে।
এগরায় বেআইনি বাজির কারখানায় বিস্ফোরণের পর প্রশাসনকে সর্বোচ্চ স্তর থেকে সতর্ক করা হয়েছিল। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেআইনি বাজি রুখতে রাজ্য জুড়ে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তার পর বেআইনি বাজি উদ্ধারে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশিও শুরু হয়েছিল। সে সময় দত্তপুকুরেও পুলিশি অভিযানে মেলে অন্তত ২০০ কুইন্টাল বাজি। অভিযোগ, ওই বিপুল পরিমাণ বেআইনি ভাবে বাড়িতে মজুত করে রাখা হয়েছিল।
দত্তপুকুর থানার নীলগঞ্জ ফাঁড়ির নীলগঞ্জ ইছাপুর পঞ্চায়েত এলাকায় সে সময় পুলিশের তল্লাশি অভিযান চলে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোপন সূত্র মারফত খবর মেলে, কাঠুরিয়া এলাকায় ইবাদত মণ্ডল নামে এক জনের বাড়িতে প্রচুর বাজি মজুত রয়েছে। সেই খবর পাওয়ামাত্রই বারাসতের এসডিপিওর নেতৃত্বে ইবাদতের বাড়িতে তল্লাশি চালায় দত্তপুকুর থানার পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছিল বেআইনি বাজি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন আরও সচেতন হলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। স্থানীয় এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘এই কারখানা সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে আমরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু তার পরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেই বহাল তবিয়তে চলছিল বাজি তৈরির কারবার।