অপরিচ্ছন্ন: খোলা নিকাশি নালার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। নিজস্ব চিত্র।
ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্যজেলায় ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। কিন্তু ডায়মন্ড হারবার পুরনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিকাশি নালা কার্যত মশার আঁতুরঘরে পরিণত হয়েছে। চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের ১০টি ভবনের মধ্যে রোগী পরিষেবা দিতে পুরনো ভবন ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ব্যবস্থা রয়েছে। ওই দু’টি জায়গার বহির্বিভাগে সকাল থেকে রোগীরা ভিড় জমান। পুরনো ভবনের বহির্বিভাগে প্রসূতি ও শিশু বিভাগ, জেনারেল থ্যালাসেমিয়া, মেডিসিন-সহ কয়েকটি বিভাগের চিকিৎসক বসেন। এক একটি বিভাগে দু’তিনজন করে চিকিৎসক মিলিয়ে প্রায় ১৫-২০ জন চিকিৎসক রোগী দেখেন। বহির্বিভাগের সামনে টিকিট করার জন্য ভোর থেকে লম্বা লাইন পড়ে ঠিক নিকাশি নালার পাশেই।
ওই নালায় জমা জলের উপর প্লাস্টিক, আবর্জনা ভাসছে। তা পচে দুর্গন্ধও বেরোয়। জমা জলে মশার ডিম পেড়ে লার্ভা থেকে মশা তৈরি হচ্ছে। মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা।
লাইনে দাঁড়ানো মানুষের মাথার উপরে সামান্য অংশই ছাউনি-ঘেরা। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে সমস্যা আরও বাড়ে। রোগীর পরিজনের থাকার ছাউনি পাশে নালার উপরে স্ল্যাব না থাকায় সেখানেও বাড়ছে মশার উপদ্রব। আবার মূল ভবন থেকে ৫০ মিটার দূরত্বে পাঁচিলের পিছনে জাতীয় সড়কের পাশে নিকাশি-খালটি কচুরিপানায় ভরে রয়েছে। সেখান থেকেও দূষণ ছড়াচ্ছে ও মশার লার্ভা বাড়ছে।
হাসপাতাল চত্বরের নানা অংশে পড়ে রয়েছে পলিথিনের স্তূপ। নিয়ম করে পরিষ্কার না করায় তা বেড়েই চলেছে। লাইনে দাঁড়ানো রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বর যে এত আবর্জনা থাকতে পারে, না এলে বুঝতে পারতাম না। শিশু কোলে দাঁড়িয়েছিলেন সাইনা বিবি। কোলের সন্তানের হাত তুলে দেখালেন, মশার কামড়ে র্যাশ বেরিয়েছে।
ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার বিজেপির মিডিয়া ইনচার্জ মনোতোষ সর্দারের অভিযোগ, “ডেঙ্গি দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ইতিমধ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে শাসকদলের নেতাও মারা গিয়েছেন। ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগ অপরিচ্ছন্ন থাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। নিকাশি নালা সংস্কার ও পরিষ্কার রাখার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
ডায়মন্ড হারবার সিপিএম নেতা সমর নাইয়ার অভিযোগ, “ওই হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনের চত্বরটিই অস্বাস্থ্যকর। অথচ, শ’য়ে শ’য়ে রোগী বহির্বিভাগে আসেন। অবিলম্বে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো, মশা মারার তেল স্প্রে করা উচিত ওই অংশে।”
এ বিষয়ে ডায়মন্ড হারবারের পুরপ্রধান তথা ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন প্রণব দাস বলেন, “হাসপাতাল চত্বরে সমস্যার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খালে কচুরিপানা তোলার জন্য কথা বলব।”
হাসপাতালের সরকারি অধ্যক্ষ তন্ময়কান্তি পাঁজা বলেন, “হাসপাতালের সামনে নিকাশি নালায় জমা জলের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে পূর্ত দফতর ও পুরসভা সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।”