ছবি এপি।
আমপানের তাণ্ডবে বাড়ি ভেঙে কার্যত পথই এখন ঠিকানা বারাসত ২ নম্বর ব্লকের দাদপুরের ওহিদ আলি, রাইমা, সোনাপান বিবির মতো অনেকের। ওহিদ পেশায় দিনমজুর। বাকি দু’জন পরিচারিকার কাজ করেন। ঘর তৈরির সরকারি সাহায্য মেলেনি এখনও। কখনও পঞ্চায়েতে ধর্না, কখনও পথেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ওহিদ, রাইমা-রা। তাঁদের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের ঘনিষ্ঠদের সরকারি সাহায্য পাইয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু রাইমা, সোনাপানের মতো অসংখ্য মানুষের কথা শুনবেন কে?
বারাসতের দু’নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতিরই পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আসের আলি কামদুনি স্কুলের শিক্ষক। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর বাড়িও। ভেঙে পড়া সেই বাড়ি মেরামতির জন্য তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার টাকা। আসেরের আত্মীয়েরাও বাড়ি সারাইয়ের টাকা পেয়েছেন, এমনই অভিযোগে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন এলাকাবাসী। যদিও আসেরের বক্তব্য, ‘‘অন্য সকলের সঙ্গেই আবেদন করেছিলাম। তবে টাকা ফেরত দেব।’’
শুধু আসের নন। আমপানে যাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের বদলে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের তো বটেই, তাঁদের আত্মীয়দেরও ঘর তৈরির টাকা পাইয়ে দিচ্ছেন এমন অভিযোগে রোজই উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় ঘেরাও, পথ অবরোধ চলছে। আরও অভিযোগ, ১০০ দিনের প্রকল্প থেকেও পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা পাঁচ লক্ষের বেশি। এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ১৫ হাজার মানুষ ঘর তৈরির টাকা পেয়েছেন। কিন্তু শাসন, কদম্বগাছি, দেগঙ্গা, দত্তপুকুর, বামনগাছিতে শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে চলছে বিক্ষোভ।
এক দিকে লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। এর উপরে আমপানের এক মাস পরেও ঘর ভেঙে পড়ে রয়েছে। এই অবস্থায় আর্থিক সাহায্যের আশায় বিভিন্ন প্রশাসনিক অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ। ৫০ টাকা খরচ করে এসে সম্প্রতি দেগঙ্গা ব্লক অফিসে লাইন দিয়েছিলেন মমতাজ বিবি। তিনি বলেন, ‘‘এত টাকা খরচ করে তো বার বার আসতে পারব না।
তাই বৃষ্টির মধ্যেও এসেছিলাম।’’ গাংনিয়ার জাকির মল্লিক বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্যেরা শুধু তাঁদের লোকেদের টাকা পাইয়ে দিচ্ছেন। তাই বিডিও-র কাছে বাড়ি তৈরির সাহায্যের আবেদন নিয়ে এসেছি।’’
এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে ধরেননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তবে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা যাতে সাহায্য পান, প্রশাসন সর্বতোভাবে সেই চেষ্টা করছে। বাড়ি তৈরির টাকা নিয়ে অভিযোগ এলে তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’