মায়ের সঙ্গে ফারুক। নিজস্ব চিত্র।
এক কামরার ভাড়া বাড়ি। তার মধ্যেই কোনও রকমে মাথা গুঁজে থাকেন চার জন। একই ঘরে বাকিরা ঘুমিয়ে পড়লে রাতে পড়াশোনা করতে হত মোবাইলের আলোয়। এ সবের মধ্যেও মাধ্যমিকে নজর কাড়া ফল করেছে ভাঙড় ২ ব্লকের কাঁঠালিয়া হাই স্কুলের ছাত্র ওমর ফারুক। ৬০৬ নম্বর পেয়েছে সে। বছর কয়েক আগে স্ত্রী ও দুই পুত্রকে নিয়ে চন্দনেশ্বর থেকে ভাঙড় বাজারের ওই ভাড়া বাড়িতে এসে উঠেছিলেন ফারুকের বাবা আব্দুর রহিম খান। ফারুককে ভর্তি করেন কাঁঠালিয়া হাই স্কুলে। রহিম ভাঙড় কলেজ রোডে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। মাসে বেতন মাত্র ৬ হাজার টাকা। স্ত্রী রোকেয়া খান সংসার সামলান। বড় ছেলে ওসমান গনি খান ইংরেজিতে স্নাতক। বর্তমানে গৃহশিক্ষকতা করেন। ফারুক জানায়, বাড়িতে একটাই ঘর। সেখানেই রাতে বাবা-মার সঙ্গে থাকে সে। দাদা থাকে বারান্দায়। রাতে বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়লে ঘরের এক কোণে মোবাইলের আলো জ্বেলে পড়াশোনা করত সে। সারা দিনে ৪-৫ ঘণ্টা পড়ত। গৃহশিক্ষক রাখার ক্ষমতা ছিল না। দাদা সময় পেলে পড়া দেখিয়ে দিতেন। ভাঙড়ের একটি কোচিং সেন্টারে পরীক্ষার আগে ভর্তি হয়েছিল ফারুক। আর্থিক সমস্যার কথা জেনে ওই কোচিং সেন্টার কোনও টাকা নিত না। শাহরুখের ভক্ত ফারুক। ভালবাসে ক্রিকেট দেখতে। লাজুক স্বভাবের ছেলেটি পাঠ্য বইয়ের বাইরেও নানা ধরনের বই পড়তে ভালবাসে। ফারুক জানায়, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে ডাক্তার হতে চায়। কিন্তু অভাবের সংসারে স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, জানা নেই। ফারুকের কথায়, “আমার নিত্যনতুন বই পড়তে ভাল লাগে। ডাক্তার হয়ে গরিব মানুষের সেবা করতে চাই।” আব্দুর রহিম খান বলেন, “ছেলে ছোট থেকেই মেধাবী। কিন্তু আমরা সে ভাবে পাশে থাকতে পারিনি। অভাবের সংসারে ভাল গৃহশিক্ষক দিতে পারিনি। যদি ওকে সব রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়, তা হলে হয় তো আরও ভাল কিছু করবে।” কাঁঠালিয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জার্জিস হোসেন বলেন, “ফারুক অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। ওর সাফল্যে আমরা খুশি। ওর পড়াশোনা বা বই কেনার ক্ষেত্রে যদি কোনও সমস্যা হয়, তা হলে আমরা পাশে থেকে সব রকম সহযোগিতার চেষ্টা করব।”