নরেন্দ্রপুরের স্কুলে গন্ডগোলের ঘটনায় এখনও অধরা প্রধান শিক্ষক। —ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্রপুরের স্কুলে গন্ডগোলের ঘটনায় সপ্তাহ ঘুরে গিয়েছে। কিন্তু এখনও অধরা মূল অভিযুক্ত সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ। কেন এত দিনেও তাঁকে ধরা গেল না? সোমবার মামলার শুনানিতে সেই প্রশ্নই তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার তিনি জানতে চান, ‘‘প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করা গেল না কেন? এত দিনেও কেন অধরা প্রধান শিক্ষক? কত দিনে পুলিশ সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারবে?’’
নরেন্দ্রপুরের বলরামপুর মন্মথনাথ বিদ্যামন্দিরের প্রধানশিক্ষক সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ এবং আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কলকাতা হাই কোর্ট গত সোমবারের মধ্যে প্রধান শিক্ষক-সহ অভিযুক্তদের গ্রেফতারির নির্দেশ দিয়েছিল। আদালত পুলিশ সুপারকে জানিয়েছিল, মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করতে হবে।
সেই সময়সীমা পেরিয়ে আরও সাত দিন কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে পুলিশ। তবে সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদকে ধরা যায়নি। তাঁকে ইতিমধ্যে সাসপেন্ড করা হয়েছে। স্কুলে তাঁর ঘরটিও সিল করে দেওয়া হয়েছে। অন্তরাল থেকেই তিনি আগাম জামিনের আবেদন করেছেন। রাজ্যের কথা শুনে বিচারপতি বসুর প্রশ্ন, ‘‘আগাম জামিনের আবেদন করলে কি গ্রেফতার করা যায় না? পুলিশকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’’ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। তার মধ্যে পুলিশকে ঘটনার রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বসু।
উল্লেখ্য, নরেন্দ্রপুরের সংশ্লিষ্ট স্কুলে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে কয়েক দিন আগে থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। কিন্তু গত শনিবার আচমকা স্কুলে ঢুকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মারধরের অভিযোগ ওঠে কয়েক জন ‘বহিরাগতের’ বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের ঘুসি মারার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে (ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। সেই তাণ্ডবে স্কুলের ‘স্টাফ রুম’ কার্যত লন্ডভন্ড হয়। শিক্ষিকাদেরও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পর স্কুলের প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের অভিযোগ, প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় যৌন হেনস্থার ‘মিথ্যা’ মামলায় ফাঁসানো হয় এক শিক্ষককে। তার পরই বহিরাগতদের দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। অন্য দিকে, প্রধানশিক্ষক তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেন, শিক্ষকদের উপরে মারধরের ঘটনা তাঁর অজানা। আর যদি কিছু ঘটে থাকে তা ‘জনরোষ’। ওই ঘটনার কথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর কানে পৌঁছনো মাত্র তিনি রিপোর্ট তলব করে জানান, কাউকে ছাড়া হবে না। এর পর রবিবার দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সোমবার ওই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, প্রধানশিক্ষক-সহ যাঁদের নাম এফআইআরে রয়েছে, তাঁদের সবাইকে গ্রেফতার করতে হবে। আক্রান্ত শিক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে হবে। মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সেদিকে নজর রেখে আদালত মধ্যশিক্ষা পর্ষদের উদ্দেশে জানায়, নরেন্দ্রপুরের ওই স্কুলে পরীক্ষাকেন্দ্র হলে সেখানে ইনচার্জ নিয়োগ করতে হবে।