অবস্থানে অনড় পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।
র্যাগিংয়ের জেরে ডাক্তারি পড়ুয়ার মৃত্যুর অভিযোগে ব্যাহত রোগী পরিষেবা। মঙ্গলবারও অচলাবস্থা দেখা গেল বরাহনগরের হাসপাতালে। অন্য দিকে, পরিষেবা না পেয়ে ফিরতে হচ্ছে অনেককে।
সোমবার মাঝরাত থেকে বরাহনগরের ওই হাসপাতালে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের হস্টেলে বিক্ষোভে বসেছেন পড়ুয়ারা। তাঁদের দাবি, প্রিয়রঞ্জন সিংহ নামে তাঁদের সহপাঠী র্যাগিংয়ের জেরে আত্মহত্যা করেছেন। এক জন ঘরের জানলা দিয়ে ডাক্তারির ওই দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে। এর জেরে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবাও।
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে চিকিৎসার জন্য বরাহনগরের এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অসুস্থ শিশুদের নিয়ে এসে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে পরিবারকে। হালিশহর থেকে শিশুর চিকিৎসা করাতে আসা পম্পা ঘোষ নামে এক মহিলার কথায়, ‘‘এসে শুনলাম এক পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছেন। তাই হাসপাতালের গেট খুলবে না। অপেক্ষা করছিলাম। এ বার ফিরে যাচ্ছি।’’
অন্য দিকে, মৃত পড়ুয়ার সহপাঠীরা জানাচ্ছেন যতক্ষণ না দোষীরা শাস্তি পাবেন, তাঁরা হাসপাতালের কাজকর্ম বন্ধ করে রাখবেন। তাঁদের বোঝাতে যান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এক জন। বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের তিনি বোঝান,‘‘যাঁরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছেন তাঁরা মানুষ, আমরাও মানুষ। প্রিয়রঞ্জনও তাই ছিলেন। এখন রোগীদের স্বার্থে হাসপাতালের গেট খোলা দরকার।’’ যদিও তাতে রাজি হননি বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা। তাঁরা সাফ জানান, গেট খুলবে না। প্রয়োজনে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে রোগী দেখুন চিকিৎসকেরা। পড়ুয়াদের দাবি, ওই হাসপাতালে কোনও জরুরি বিভাগ নেই। তাই গুরুতর অসুস্থ কোনও রোগী এখানে আসেন না। তাঁরা প্রিয়রঞ্জনের অকালমৃত্যুর বিচার চান। হাসপাতাল চত্বরে বার বার ওঠে ‘জাস্টিস ফর প্রিয়রঞ্জন’ স্লোগান। বার বার উত্তেজনা ছড়াচ্ছে হাসপাতাল চত্বরে। হাসপাতালের গেটের বাইরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। সব মিলিয়ে দু’দিন ধরে বরানগরের হাসপাতালে বিভোক্ষ অব্যাহত।
অন্য দিকে, পুলিশ সূত্রে খবর, যে সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে তা মৃত ছাত্রের কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ। ওই লেখার সঙ্গে প্রিয়রঞ্জনের হাতের লেখার মিল আছে কি না জানতে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছে বরাহনগর থানার পুলিশ। হস্টেলে অত্যধিক মাত্রায় র্যাগিংয়ের জেরেই আত্মহত্যা করেছেন ডাক্তারির ছাত্র। এমন দাবি করেছে মৃতের পরিবারও। বরাহনগর থানায় মোট ৯ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারাকপুর কমিশনারেট।