রেল লাইন তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি। —প্রতীকী ছবি।
জয়নগর-মজিলপুর স্টেশন থেকে রায়দিঘি পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য ঘটা করে শিলান্যাস হয়েছিল। রায়দিঘির মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিলেন। বাসে বাদুরঝোলা হয়ে কলকাতা যেতে হবে না বলে মনে হয়েছিল তাঁদের।
কিন্তু সেই লাইন এখনও তৈরি হয়ন। ওই লাইনের কাজ শুরুর আবেদন জানিয়ে মাসখানেক আগে সংসদে আওয়াজ তুলেছেন স্থানীয় সাংসদ বাপি হালদার। পাশাপাশি, তিনি রেলমন্ত্রীকেও চিঠি লিখেছেন বলে জানিয়েছেন। সাংসদের কথায়, ‘‘রায়দিঘি থেকে জয়নগর-মজিলপুর পর্যন্ত রেললাইন চালু হলে লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন। এলাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’’
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়নগর-মজিলপুর স্টেশন থেকে রায়দিঘি পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য ভার্চুয়ালি শিলান্যাস করেছিলেন রায়দিঘি বাসস্ট্যান্ডে। রায়দিঘিতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে মঞ্চ বেঁধে ঢাকঢোল পিটিয়ে শিলান্যাস অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অধুনা প্রয়াত, তৎকালীন সাংসদ চৌধুরী মোহন জাতুয়া। কিন্তু আজও পর্যন্ত কাজ শুরুই হয়নি।
রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লক একটি নদীনালা ঘেরা প্রত্যন্ত এলাকা। মানুষকে কলকাতায় আসতে হলে বাস বা ছোট গাড়িতে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মথুরাপুর স্টেশনে আসতে হয়। সেখান থেকে দেড় থেকে পৌনে দু’ঘণ্টা ট্রেনে চেপে শিয়ালদহে পৌঁছতে হয়। সব মিলিয়ে সময় লাগে প্রায় তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা। খরচ প্রায় ২০০ টাকা! অথচ, রায়দিঘি থেকে সরাসরি রেললাইন চালু হলে মাত্র দেড় থেকে পৌনে দু’ঘণ্টার মধ্যে অনেক কম খরচে শিয়ালদহে পৌঁছনো যাবে।
শুধু মথুরাপুর ২ ব্লক নয়, রায়দিঘি থেকে রেলপথ চালু হলে মথুরাপুর ১, পাথরপ্রতিমা, জয়নগর ১, কুলতলি ব্লকের একাংশের মানুষও সুবিধা পাবেন। ওই ব্লকগুলি মূলত কৃষিপ্রধান। এলাকায় কোনও হিমঘর এখনও তৈরি হয়নি। বড় কোনও বাজারও সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে কৃষিজাত দ্রব্য, আনাজ, মাছ সহজেই ট্রেনপথে শিয়ালদহে পৌঁছে যেত। তাতে আর্থিক উন্নয়ন হত চাষিদের। আরও নানা ভাবে কর্মসংস্থান বাড়তে পারত বলে মনে করেন অনেকেই। মুমূর্ষ রোগীকে নিয়ে সরাসরি কলকাতায় পৌঁছে গেলে ভাল চিকিৎসা মিলতে পারত।
শিলান্যাসের পরে এত বছর কেটে গেলেও কোনও কাজ হয়নি। শিলান্যাসের পাথরটিও কে বা কারা ভেঙে ফেলেছে। যে জায়গায় শিলান্যাসের অনুষ্ঠান হয়েছিল, সেখানে এখন আগাছায় ঢাকা।
এলাকার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী দেবাশিস হালদার, সুদীপ মণ্ডলদের আক্ষেপ, ‘‘রায়দিঘি থেকে রেললাইন পাতার পরে ট্রেন চালু হওয়ার স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম। কিন্তু স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে!’’
এলাকার বাসিন্দা, প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রায়দিঘি থেকে জয়নগর-মজিলপুর পর্যন্ত রেলের কোনও অনুমোদন বা বাজেট ছিল না। ভাঁওতাবাজি করে শিলান্যাস করা হয়েছিল। এখন মুখ বাঁচাতে আবেদন জানিয়েছে রেল দফতরে।’’ বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ হালদারের কথায়, ‘‘উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দফতরের অনুমোদন এবং বরাদ্দ না হলেও ভোটের রাজনীতিতে করতে শিলান্যাস করেছিলেন। এখন তাংর দলের সাংসদ ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন। দেখা যাক, কী হয়।’’