Ham Radio

‘পরিষ্কার-দাদু’কে বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হ্যাম রেডিয়ো

হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দারা অবশ্য তাঁদের ‘পরিষ্কার দাদু’কে ছাড়তে চান না।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২১ ০৫:২২
Share:

পরিবেশ-বান্ধব: আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত ‘পরিষ্কার-দাদু’। নিজস্ব চিত্র।

সকাল হতে না হতেই পুকুরে স্নান সেরে বেরিয়ে পড়েন বৃদ্ধ। রাস্তার ধারে আগাছা দেখতে পেলেই দু’হাতে ছিঁড়ে পরিষ্কার করেন। গত সাত মাসে হিঙ্গলগঞ্জের কালীবাড়ি এলাকা, গড় পাড়ার অধিকাংশ রাস্তার ধার, বাড়ির আঙিনা একদম সাফ সুতরো করে ফেলেছেন বছর সত্তরের রাধেশ্যাম যাদব। বাদ যায়নি পুকুর পাড় বা নিকাশি নালার পাশে গজিয়ে ওঠা আগাছার ঝোপ জঙ্গলও।

Advertisement

হিঙ্গলগঞ্জের বেশ কয়েকটি পাড়া এখন রীতিমতো ঝকঝকে তকতকে বৃদ্ধের দৌলতে। পাড়ার ছেলেরা তাঁকে ডাকে ‘পরিষ্কার দাদু’ বলে। পরিবেশকে সুস্থ ও সুন্দর করে গড়ে তোলার কোনও পরিকল্পিত কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক নন তিনি। তবে এ কাজের জন্য কেউ টাকা দিতে চাইলেও হাত জোড় করে ফিরিয়ে দেন। এতেই গত কয়েক মাসে হিঙ্গলগঞ্জের মানুষের কাছে চর্চার কারণ হয়েছেন রাধেশ্যাম। স্থানীয়েরা জানান, বাংলা বোঝেন না বৃদ্ধ, হিন্দি বুঝলেও কারও কথার জবাব দেন না সচরাচর। গড় পাড়ার বাসিন্দা অমিত ঘোষ স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্মী। প্রশাসনের নজরে আনতেই তিনি বৃদ্ধের ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন। সেখানেই এক হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। ওই হ্যাম রেডিয়ো অপারেটর বৃদ্ধের ছবি নিয়ে খোঁজখবর করতে থাকেন। ছবিটি ছড়িয়ে দেওয়া হয় দেশের নানা প্রান্তে অন্য হ্যাম অপারেটরদের মধ্যে। দিন কয়েক বাদেই উত্তরপ্রদেশের হারদই জেলার বিলগ্রাম ব্লকের আজমতনগর কবিরন পূর্বা গ্রামে ওই বৃদ্ধের পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়।

ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সেক্রেটারি অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘হারদই-এর এক হ্যাম অপারেটর গ্রাম প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে রাধেশ্যাম-এর ভাই লোকনাথের খোঁজ পান। দাদার আগাছা পরিষ্কার করার ছবি দেখে হতবাক হয়ে যান লোকনাথ। তিনি তাঁর দাদাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন। দিন কয়েকের মধ্যে ওঁরা হিঙ্গলগঞ্জে যাবেন।’’ লোকনাথের পরিবারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছে বিলগ্রাম থানার পুলিশও। শুক্রবার লোকনাথের মেয়ের বিয়ে ছিল। তিনি পুলিশকে জানান, বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলেই তাঁরা হিঙ্গলগঞ্জে যাবেন। হারদইয়ের পুলিশ সুপার অনুরাগ ভাট বলেন, ‘‘আমরা ঘটনাটির উপর নজর রাখছি।’’

Advertisement

রাধেশ্যাম উত্তরপ্রদেশ থেকে কী করে বাংলাদেশ সীমান্তে হিঙ্গলগঞ্জে পৌঁছলেন তা এখনও জানতে পারেননি কেউই। তাঁর ভাইপো রমাশঙ্কর বলেন, ‘‘আগে জেঠু হরিয়ানায় থাকতেন। বাড়ি ফেরার পর থেকেই মানসিক অসুস্থ ছিলেন। লোকজনকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তেন। একদিন আচমকাই নিরুদ্দেশ হয়ে যান। আমরা প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও পরে খোঁজাখুঁজি করেছিলাম। কেউ কিছু বলতে পারেনি। বোনের বিয়ে মিটে গেলেই ওঁকে নিয়ে আসব হ্যাম রেডিয়ো থেকে যিনি জেঠুর খবর দিতে এসেছিলেন তাঁকে এবং পুলিশকেও বলেছি।’’

হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দারা অবশ্য তাঁদের ‘পরিষ্কার দাদু’কে ছাড়তে চান না। ‘‘এই ক’মাসে উনি একাই সরকারের নির্মল গ্রাম প্রকল্প সফল করেছেন’’, বলেন স্থানীয়েরা। কেউ কিছু দিলে তাঁর বাড়ি কোথায় পিছন পিছন গিয়ে দেখে আসেন, পরের দিন সেখানেই চলে তাঁর সাফাই অভিযান। অমিত বলেন, ‘‘একবারেই নিঃস্ব একজন মানুষ। আগাছা পরিষ্কারের কাস্তেটুকুও নেই। হাত দিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে কেটে-ছড়ে যায়, ভ্রুক্ষেপ নেই। কিন্তু কিছু দিলেও তো নেবেন না। তাই মনে হয় এভাবে আমাদের জন্য কেন করবেন সারা জীবন! বাড়ি ফেরার অধিকার আছে ওঁর। সেটা হ্যাম রেডিয়োর মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement