অদম্য: বাঁ দিকে, এ ভাবেই পরীক্ষা দিয়েছিল বাপি। ডান দিকে, বই মুখে বাপি। পরীক্ষার ফলে খুশি পুরো পরিবার। ছবি: দিলীপ নস্কর
হাত আর মাথা ছাড়া শরীরের অন্য অঙ্গপ্রতঙ্গ ঠিক ভাবে কাজ করে না। বসে থাকার সামর্থটুকুও নেই। পড়াশোনা করতে হয় শুয়ে শুয়ে। পরীক্ষাও দিয়েছে সে ভাবেই। তবে ফলাফল দেখে বোঝার উপায় নেই। মগরাহাটের কলস পঞ্চায়েতে কলস সুন্নিপুকুর গ্রামের বাপি ফকির এ বার ৩১২ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে।
বছর বাইশের যুবক জন্ম থেকেই নানা সমস্যায়। খাওয়া-পরা থেকে শুরু করে সব কাজেই মা বা অন্যদের সাহায্য লাগে। ছোট থেকে হুইল চেয়ারে করেই স্কুলে যেত সে। কখনও মা সেরিনা বিবি, কখনও বাবা সামিম ফকির আবার কখনও প্রতিবেশীরা স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসার দায়িত্ব সামলাতেন। বাড়ি থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে কলস হাইস্কুল থেকে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল বাপি।
সেরিনার তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বড় বাপি। বাবা-মা দু’জনেই দর্জির কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালান। বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সংসারের হাল ধরতে শিখেছে বাপিও। প্রতিবন্ধকতা জয় করে শুয়ে শুয়ে নাইলন সুতোর ব্যাগ বানায়। সারা দিনে ২০-২৫ টাকা আয়ও হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মাটির বারান্দায় শুয়ে জালের ব্যাগ তৈরি করতে করতে বাপি বলে, “প্রতিবেশীদের কাছে ফলাফল জানার পরে কী যে আনন্দ হল, তা বলে বোঝাতে পারব না। পরে স্যারেরা এসেও শুভেচ্ছা জানালেন।”
বাপির ইচ্ছা, বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করার। কিন্তু পরিবারের যা আর্থিক অবস্থা, তাতে ছেলে কী ভাবে পড়াশোনা চালাবে, তা ভেবে দিশাহারা মা-বাবা। এই পরিস্থিতিতে বাপির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন উস্তির সরাচি অম্বিকাচরণ হাইস্কুলের শিক্ষক সঞ্জয় দাস। বাপির পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। সঞ্জয় বলেন, “ওর ভর্তির টাকা আমি পাঠিয়ে দিয়েছি। বইপত্রও কিনে দেব। সমস্ত রকম সাহায্য করব।”