অফিস টাইমে ভিড় হাবড়া প্ল্যাটফর্মে। মানা হল না শারীরিক দূরত্ববিধি। ছবি: সুজিত দুয়ারি
শুরুটা হয়েছিল সাজানো গোছানো। কিন্তু বুধবার লোকাল ট্রেনের চাকা যত গড়াল, মধ্যবর্তী স্টেশনগুলিতে ফিরে এল হুড়োহুড়ির চেনা ছবি। ঠাসাঠাসি ভিড়, কনুইয়ের গুঁতো, জুতোর উপরে জুতোর চাপ, দমবন্ধ পরিস্থিতিতে দূরত্ববিধি শিকেয় উঠল। ফলে বড় স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার মুহূর্তে থার্মাল গানের ব্যবহার, বাঁশের ব্যারিকেড, স্যানিটাইজ়ারের সুরক্ষাবিধি আদৌ কতটা কাজে লাগল, উঠল সেই প্রশ্ন।
দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্টেশনে সাতসকালে, সাড়ে সাত মাস পরে চালু হওয়া লোকাল ট্রেনের কামরা শুরুতে ফাঁকাই ছিল। দূরত্ববিধি মেনে যাত্রীদের সরিয়ে দিতেও দেখা গিয়েছে পুলিশকে। কিন্তু মাঝের স্টেশনগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন ছিল ঢিলেঢালা, তেমনই শারীরিক পরীক্ষারও বালাই ছিল না। ট্রেন এগোলে মাঝের কাটা চিহ্ন দেওয়া সিটেও টপাটপ বসে পড়েছেন যাত্রীরা। কামরার ভিতরে মাস্ক ঝুলেছে অনেকেরই থুতনির নীচে। প্রশ্ন করলে উত্তর মিলেছে, ‘‘এই ভিড় ট্রেনে গরমের মধ্যে মাস্ক পরে থাকা যাচ্ছে না।’’
মছলন্দপুরের নিত্যযাত্রী দেবব্রত বসুর মন্তব্য, “বনগাঁ লোকালে শারীরিক দূরত্ব কী ভাবে মানা হচ্ছে, সেটা দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এই লাইনে ও সব হওয়ার উপায় নেই।’’ বনগাঁ লোকাল ঠাকুরনগর পার হতেই প্রায় প্রতিটি স্টেশনে হুড়মুড়িয়ে উঠেছেন যাত্রীরা। ফাঁকা আসন দূরের কথা, ততক্ষণে এক আসনে চার যাত্রীকে বসে থাকতে দেখা গেল।
একই ছবি ধরা পড়েছে শিয়ালদহ মেন লাইনেও। নৈহাটি-ব্যারাকপুর স্টেশনে যাত্রীদের উপরে নজরদারি ছিল। কিন্তু কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, কল্যাণী, গেদে, শান্তিপুর বা রানাঘাট লোকালে ফিরল সেই চেনা ভিড়। ট্রেনে উঠতে বেগ পেতে হয়েছে কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, শ্যামনগরের যাত্রীদের। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা মিঠু চক্রবর্তী বলেন, “শুরুর দিকে ট্রেন ফাঁকাই ছিল। ট্রেনে পুলিশ নজরদারিও চালাচ্ছিল। বিনা মাস্কের যাত্রীদের নামাতেও দেখেছি। কিন্তু রানাঘাটের পর থেকে ট্রেনে আর দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। তখন আর পুলিশকেও দেখতে পাইনি।’’
বসিরহাটে হাসনাবাদ-শিয়ালদহ ট্রেনে রেল পুলিশ ছিল। যাত্রীদের তাপমাত্রাও পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু ট্রেন স্টেশন ছাড়তেই সেই আগের দৃশ্য। দেগঙ্গা স্টেশনের যাত্রীদের রীতমতো লড়াই করে কামরায় উঠতে হয়েছে। এই শাখায় ভোর তিনটের পরে পৌনে সাতটা, এবং আটটার পরে দুপুর এগারোটায় ট্রেন হওয়ায় ভিড় বেশি হয়। যাত্রীদের দাবি, সকাল ৮টার পরে আর একটি ট্রেন দেওয়া হোক ১১টার আগে।
প্রায় একই ছবি চোখে পড়েছে ডায়মন্ড হারবার এবং ক্যানিং লোকালেও। শুরুর দিকে বজ্র আঁটুনি পরের স্টেশনগুলিতে না থাকায় ফস্কা গেরোর সুযোগে ভিড় বেড়েছে।