থানা পরিদর্শন করে বেরিয়ে আসছেন বিনীত গোয়েল। ছবি: সামসুল হুদা।
ভাঙড়কে কলকাতা পুলিশের আওতায় আনার পরে এক মাস পেরিয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন দাপুটে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। তার দু’দিন পরেই ভাঙড়ের চারটি নতুন থানা এবং উপ-নগরপালের অফিসের কাজকর্ম, এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি-সহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখতে রবিবার ভাঙড়ে এলেন কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েল। তিনি বলেন, ‘‘ভাঙড়ের সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে। আইনশৃঙ্খলার কোনও সমস্যা নেই। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যাতে এলাকায় কোনও সমস্যা না হয়।’’
রাজ্য পুলিশের বারুইপুর পুলিশ জেলার কাশীপুর ও ভাঙড় থানা ভেঙে ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের চারটি থানা গঠন করা হয়েছে। নলমুড়িতে তৈরি হয়েছে উপ-নগরপালের অফিস। এ বছর ৮ জানুয়ারি কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ডিভিশন গঠন করে কাজ শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। এ দিন সেই সব দফতরের কাজকর্ম খতিয়ান নেন নগরপাল। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত নগরপাল ২ শুভঙ্কর সিংহ সরকার, যুগ্ম নগরপাল (ট্রাফিক) রূপেশ কুমার, উপ-নগরপাল সৈকত ঘোষ, উপ-নগরপাল (ট্রাফিক) অমিতকুমার সাউ প্রমুখ।
কলকাতা পুলিশ দায়িত্ব নেওয়ার পরে বড় কোনও আইনশৃঙ্খলার অবনতির ঘটনা না ঘটলেও ভাঙড়, উত্তর কাশীপুর, পোলেরহাট থানা এলাকায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে আইএসএফ-তৃণমূলের সংঘর্ষ ঘটেছে। পোলেরহাট থানা ঘেরাও করে জমি কমিটির বিক্ষোভ-সহ বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় আইএসএফ কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এর আগে তিন বার আরাবুল গ্রেফতার হয়েছিলেন। সে সময়ে তাঁর অনুগামীরা রাস্তা অবরোধ করেন, এলাকায় বিক্ষোভ দেখান। এ বার আরাবুল গ্রেফতার হওয়ার পরেও কোথাও আইনশৃঙ্খলার কোনও অবনতি হয়নি। আরাবুল গ্রেফতার হওয়ার দু’দিন পরে নগরপালের ভাঙড় পরিদর্শনের ক্ষেত্রে অন্য কোনও তাৎপর্য রয়েছে কি না, তা নিয়ে অবশ্য শাসক দল বা পুলিশের তরফে কেউ মুখ খোলেননি।
এ দিন বিনীত প্রথমে আসেন নলমুড়িতে উপ-নগরপালের অফিসে। সেখানে চন্দনেশ্বর থানার ওসি সুনীল দেবনাথ, ভাঙড় ট্রাফিক গার্ডের ওসি মিদ্দা ইমামউদ্দিন-সহ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, ট্রাফিক গার্ডের কাজকর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন নগরপাল। এরপরে তিনি ভাঙড় থানা পরিদর্শনে যান। সেখানে পুলিশ কর্মীদের ব্যারাক-সহ থানার পরিকাঠামো এবং কাজকর্ম খতিয়ে দেখেন। ভাঙড় থানার ব্যারাক দেখে নগরপাল বিনীত কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
পরে উত্তর কাশীপুর থানায় যান নগরপাল। সেখানে মধ্যাহ্নভোজনের পরে থানার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে এবং গণনার দিন ভাঙড়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষ এবং আইএসএফ-তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য নেন। থানার অফিসার ও কর্মীদের থাকার জায়গা, ব্যারাক ও ক্যান্টিনও ঘুরে দেখেন। পোলেরহাট থানায় গিয়েও সব কিছু খতিয়ে দেখেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন থানা পরিদর্শন করার পাশাপাশি থানার কাজকর্ম কী ভাবে চলছে, অফিসার ও পুলিশকর্মীরা বাড়িতে যাচ্ছেন কি না বা তাঁরা কোথায় থাকছেন, কী ভাবে থাকছেন— সে সবের খোঁজ নেন বিনীত। এলাকার দুষ্কৃতীদের গতিবিধি সম্পর্কেও জানতে চান।
পুলিশ সূত্রের খবর, এমনিতে কলকাতা পুলিশের কর্মীরা আট ঘণ্টা ডিউটি করার পর বাড়িতে চলে যান। কিন্তু ভাঙড় ডিভিশন হওয়ার পরে সমস্ত পুলিশ কর্মীদের থানার ব্যারাকে থাকা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ কর্মীদের থাকতে যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয়, তার উপরে জোর দেন নগরপাল। যেহেতু এখনও ভাঙড়ের চারটি থানায় সমস্ত পরিকাঠামো সম্পূর্ণ করা যায়নি, তাই এই পরিদর্শন বলে মনে করা হচ্ছে।