বৃহস্পতিবার গোপালনগরের রামশঙ্করপুরে নিজের বাড়িতে ফিরেছেন জয়ন্ত। —নিজস্ব চিত্র।
পেটের দায়ে কাবুলে গিয়েছিলেন। তবে প্রায় গোটা আফগানিস্তান তালিবানের দখলে চলে যাওয়ার পর সে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যদিও কাজের ডাক পেলে ফের আফগানিস্তান যেতে রাজি গোপালনগরের বাসিন্দা জয়ন্ত বিশ্বাস। তাঁর দাবি, তালিবানের ভয় নেই। তাই আর সকলের মতো আগেভাগেই সে দেশ ছাড়েননি। দায়িত্ব পালনের জন্যই এত দিন থেকে গিয়েছিলেন কাবুলে।
বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরের রামশঙ্করপুরে নিজের বাড়িতে পা রেখেছেন জয়ন্ত। জয়ন্তর মতোই কাবুল থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানে করে দেশে ফিরেছেন আরও অনেকেই। তবে কাজের সুযোগ পেলে ফের আফগানিস্তানে যেতে চান জয়ন্ত। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে তিনি বলেন, “ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানে কাবুল ছেড়েছিলাম গত ২৬ অগস্ট রাত সাড়ে ৩টেয়। পরের দিন সকাল সাড়ে ৭টায় দিল্লি বিমানবন্দরে নামি। এর পর আইটিবিপি (ভারত তিব্বত বর্ডার পুলিশ)-এর ক্যাম্পে ১৪ দিনের কোয়রান্টিনে ছিলাম। গত কাল (বৃহস্পতিবার) বাড়ি ফিরেছি।”
কাবুল বিমানবন্দরে মোতায়েন আমেরিকার সেনার জন্য রান্নার কাজ করতেন বছর চল্লিশের জয়ন্ত। তাঁর সঙ্গে গোপালনগরের আরও তিন জন কাবুলে গিয়েছিলেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে তাঁরা বাড়ি ফিরে এলেও আর সকলের মতো তড়িঘড়ি কাবুল ছাড়েননি তিনি। কেন সকলের শেষে বাড়ি ফিরলেন? তালিবানের ভয় নেই? উত্তরে অকুতোভয় জয়ন্ত। তিনি বলেন, “আমার কোনও ভয় নেই। কিসের ভয়? আমার সঙ্গে যাঁরা ছিল, তাঁরা বলেছিল এখনই দেশে ফিরে চল। আমি কী করব? কাবুল বিমানবন্দরে সাড়ে চার হাজারের মতো আমেরিকার সেনার রান্নাবান্নার কাজে ছিলাম। দায়িত্ব পালন করব, না চলে আসব? যারা আমাকে মাইনে দিয়ে এত দিন ধরে পরিবারের দেখভাল করল, তাদের প্রতি দায়িত্ববোধ নেই! সে জন্যই এত দেরিতে ফিরলাম।”
আড়াই বছরের উপরে কাবুলে কাজ করেছেন জয়ন্ত। কাবুল দখলের পর বিমানবন্দরে হাজার হাজার সাধারণ আফগানকে প্রাণভয়ে ছোটাছুটি করতেও দেখেছেন। শুনেছেন, দেশ ছেড়ে পালাতে গিয়ে বিমান থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। তা সত্ত্বেও ভয় পাননি। নিজের দায়িত্ব পালনের জন্যই সে দেশ ছাড়েননি বলে দাবি জয়ন্তর। কাবুল ছেড়ে গিয়েছে আমেরিকার সেনারাও। তবে জয়ন্তর দাবি, “আমেরিকার সেনারা কখনও কাজের জন্য ডাকলে ফের আফগানিস্থানে যেতে রাজি।”
রামশঙ্করপুরে জয়ন্তের পরিবার বলতে মা-বাবা, স্ত্রী এবং ছ’বছরের এক মেয়ে। সত্তরোর্ধ্ব বাবা এক সময় চাষবাস করে সংসার চালালেও এখন গোটা পরিবার নির্ভর করে জয়ন্তের উপর। তবে কাবুলের কাজ হারিয়ে ঘরে ফিরলেও জয়ন্তর পরিবার খুশি। সেই খুশিতে শুক্রবারও পড়শিদের মিষ্টিমুখ করিয়েছেন জয়ন্তর স্ত্রী মল্লিকা। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন কাবুলে আটকে ছিল (জয়ন্ত)। কাবুল থেকে প্রাণে বেঁচে যে বাড়িতে ফিরে এসেছে, তাতেই আমরা খুশি।”