প্রস্তুতি: সারানো হচ্ছে বেঞ্চ। গাইঘাটার একটি স্কুলে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
আগামী সপ্তাহ থেকেই খুলে যাচ্ছে স্কুল। আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন চলবে। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে চালু হওয়ার আগে স্কুলগুলির সংস্কার প্রয়োজন। রাজ্য সরকারের তরফে তার জন্য অর্থ বরাদ্দও হয়েছে। ব্লক প্রশাসন মারফত কাজ হবে। অনেক স্কুলেই সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। তবে দুই জেলার কিছু স্কুলে এখনও শুরু হয়নি কাজ। কিছু ক্ষেত্রে কাজ শুরু হলেও, স্কুল খোলার আগে তা শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে কর্তৃপক্ষ।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালি ২ ব্লকের সন্দেশখালি রাধারানি হাইস্কুল সূত্রের খবর, স্কুলের প্রায় ১৩ টি ঘরের জানালা ও দরজা ভেঙে গিয়েছে। প্রায় ৩০টি বেঞ্চ ভেঙে গিয়েছে। সেই সঙ্গে ছাত্র ছাত্রীদের শৌচাগার সংস্কার করা প্রয়োজন। কয়েকটি ঘরে প্লাস্টার করা দরকার। এছাড়া জলের পাইপ লাইন, বিদ্যুতের লাইনের মেরামতি প্রয়োজন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিকাশচন্দ্র পাল বলেন, “ব্লকের তরফে সংস্কারের কাজ করা হবে বলা হয়েছিল। সেই কারণেই আমরা স্কুলের তরফে সংস্কারের কাজে হাত দিইনি। তবে এখন মনে হচ্ছে হয়তো স্কুল খোলার আগে সংস্কার হবে না। ফলে স্কুল খুললে সমস্যায় পড়তে হবে।” আতাপুর কেনারাম হাইস্কুল সূত্রের খবর, স্কুলের পানীয় জলের ৬টি কলই খারাপ হয়ে গিয়েছে। মেয়েদের শৌচাগারের ছাউনির ভাঙাচোরা অবস্থা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন রায় বলেন, “এখনও সংস্কারের কাজ শুরুই হল না। স্কুল খুললে খুব সমস্যা হবে পানীয় জল ও মেয়েদের শৌচাগার নিয়ে। তাই স্কুল তহবিল থেকেই মেয়েদের জন্য ছোট একটি শৌচাগার করছি। অন্তত একটা কল মেরামত করার কাজ শুরু করব ভাবছি।” স্কুল চালু হওয়ার আগে যে সংস্কারের কাজ শেষ হওয়া সম্ভব নয়, তা মেনে নেন সন্দেশখালি ২-এর বিডিও অর্ণব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। নিয়ম মেনে কাজ করতে গেলে যেটুকু সময়ের প্রয়োজন, তাতে স্কুল খোলার আগে কাজ শুরু হওয়া সম্ভব নয়। স্কুল খোলার পরপরই কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন স্কুলে সোমবার থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। মহকুমার অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দিব্যেন্দু পাল বলেন, “প্রথম পর্যায়ে দরজা, জানালা, বেঞ্চ, পানীয় জলের ব্যবস্থা ঠিক করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে স্কুল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও স্যানিটাইজ করা হবে।” কাজ শুরু হলেও, জেলার অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা যাবে না। কয়েকটি স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেরা স্কুল চত্বর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু করেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু স্কুলেও এখনও শুরু হয়নি সংস্কারের কাজ। সাগরের কয়লাপাড়া এসডি হাইস্কুল সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলের মাঠ আগাছায় ঢেকেছে। প্রত্যেক ক্লাস রুমের চেয়ার, বেঞ্চ, টেবিলগুলো বেহাল। বাদুড়ের আস্তানা ,সাপের বাসা হয়েছে স্কুলে। লাইট, ফ্যান খারাপ হয়ে পড়ে আছে। ঘূর্ণিঝড়ে স্কুলের তিন তলা ছাদের পুরো টিনের ছাউনি উড়ে যায়। ফলে ৮টি ক্লাস রুমের অবস্থা খুবই খারাপ। টাকা না মেলায় এখনও সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি। স্কুল খোলার আগে আদৌ কাজ শেষ হবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। স্কুলের শিক্ষক শুভঙ্কর রায় বলেন “স্কুল সংস্কারের জন্য সব মিলিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা দরকার। দফতরকে সে কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা না আসায় কাজ শুরুই হয়নি। জানি না কবে কাজ হবে।” সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল জানান, ইতিমধ্যেই স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। স্কুল খোলার আগেই যাতে সংস্কারের কাজ শেষ হয়, তা দেখা হচ্ছে।