গানে-গানে: সচেতনতার বার্তা। নিজস্ব চিত্র
জ্বর-ডেঙ্গিতে বিপর্যস্ত হাবড়ার জনজীবন। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে। ডেঙ্গির রোধে পুরসভা, পঞ্চায়েতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে নানা মহলে। মানুষের সচেতনতার অভাবও উঠে আসছে আলোচনায়।
এরই মাঝে ডেঙ্গি নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে গান গাইছেন স্বপন দত্ত। বাউল মানুষটি থাকেন পূর্ব বর্ধমানের খাজা আনোয়ারবেড় এলাকায়। হাবড়ার খবরে উদ্বিগ্ন মানুষটি সোমবার চলে এসেছেন হাবড়ায়। বললেন, ‘‘সংবাদপত্র থেকে জানতে পেরেছি, জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছে এখানে। বহু মানুষ আক্রান্ত। অনেকে মারা গিয়েছেন। ভাবলাম হাবড়ায় গিয়ে গান খেয়ে যদি মানুষকে সচেতন করতে পারি, তা হলে নিজেকে ধন্য মনে হবে। সে জন্যই ছুটে আসা।’’
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে শিল্পী বাউল সুরে একের পর এক ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতামূলক গান গাইলেন। গানের কথায়, ‘মশা মারার কাজে জনগণ সচেতন না হলে সরকার সচেতন না হলে, মশার বংশ ধ্বংস হবে না রে। মশা কোথায় ডিম পাড়ে জেনে নাও, ভাল করে মশার বংশ ধ্বংস হবে রে। ডেঙ্গি মশা পালাবে রে।’
হাসপাতালে জ্বর-ডেঙ্গি নিয়ে ভর্তি রোগীর আত্মীয়-স্বজনেরা তাঁকে ঘিরে ধরে মন দিয়ে শুনছিলেন গান। অনেকেই বললেন, ‘‘বাউল গানের মাধ্যমে এত সহজ করে ডেঙ্গি নিয়ে আগে কাউকে বোঝাতে শুনিনি। আমাদেরও যে সচেতন হতে হবে, তা এখন বুঝতে পারছি। এলাকা সাফ সুতরো রাখতে হবে। মশার বংশ বাড়তে দিলে চলবে না। মশারি টাঙাতে হবে।’’
হাবড়া হাসপাতাল চত্বর ছাড়াও স্বপন এ দিন যশোর রোড ধরে গান গাইতে গাইতে গিয়েছেন। লোকজনের ভিড়ও হয়েছে তাঁকে ঘিরে। জানালেন, মেদিনীপুর, বর্ধমান, হাওড়া হুগলি-সহ বিভিন্ন জেলায় তিনি এ ভাবে ছুটে যান। কখনও ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে, কখনও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে। জল অপচয় বন্ধ করা, গাছ কাটা, সাপে কাটা রোগীকে ওঝার বদলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার বার্তাও দেন গানে গানে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাঁকে নানা সচেতনতামূলক প্রচারে সামিল করা হয়। ভোটদাতাদের উৎসাহিত করতেও গান গেয়েছেন।
রাজ্য সরকার তাঁকে মাসে এক হাজার টাকা ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তবে বৃদ্ধা মা-সহ বাড়িতে ন’জনের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। গান, ছবি আঁকা শিখিয়ে কোনও রকমে সংসার চলে। এক সময়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বপনকে তিনি একতারা উপহার দেন। যা তাঁর জীবনে বড় পাওনা বলেই মনে করেন বছর ছেচল্লিশের স্বপন।
নিজেই গান লেখেন, সুর দেন। সামনেই দিল্লি যাচ্ছেন বলে জানালেন। জল অপচয় বন্ধের বিষয়ে হিন্দিতেও গান লিখছেন। দিল্লিতেও জল বাঁচাতে গাইবেন নিজের লেখা-সুরে হিন্দি গান। সময় পেলে ফের হাবড়া। আসতে চান বলে জানিয়েছেন স্বপন। এ দিন স্বপনের কথা শুনে হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘খুব ভাল কাজ করছেন ওই শিল্পী। আমরা ওঁকে ডেঙ্গি নিয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজে ভবিষ্যতে আমন্ত্রণ জানাব।’’