দগ্ধ: আগুন নেভার পরে পোড়া দোকান থেকে জিনিস বার করার চেষ্টায় দোকানিরা। বৃহস্পতিবার, আক্রার সন্তোষপুর স্টেশন সংলগ্ন চত্বরে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
ভরসন্ধ্যায় রেললাইনে পড়ে ঝলমলে বোতাম বসানো, আসন্ন ইদের পাঞ্জাবি। সেই সঙ্গে লুঙ্গি, কুর্তা, চুড়িদার, শাড়ি থেকে চামড়ার রকমারি চটি, ছবিওয়ালা প্লাস্টিকের দস্তরখান। আক্রার সন্তোষপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া দোকানদারদের অনেকের কাছে ওই পরিত্যক্ত সামগ্রী যেন আশার খড়কুটো। উৎসবের মরসুমে চার-পাঁচ লক্ষ টাকা ধার নিয়ে দোকান বসানোর পরে সব স্বপ্নই কার্যত আগুনে খাক হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রোজা ভাঙার মুখে আগুনের লেলিহান শিখার থেকে বাঁচাতে দোকানের জিনিসপত্র যে যেমন ভাবে পেরেছেন, রেললাইনের উপরে ফেলছিলেন দোকানদারেরা। সময় গড়ালে তাঁদের হিসাব, সামান্যই আগুনের গ্রাস থেকে বাঁচানো গিয়েছে। আজ, শুক্রবার সকাল হলে দোকানদারেরা আবার রেললাইনে পরিত্যক্ত সামগ্রীর কাছেই ফিরবেন। বেছেবুছে দেখবেন, আগুনের গ্রাস থেকে কতটুকু কী বাঁচানো সম্ভব হল।
এমন নয় যে, সন্তোষপুর রেল স্টেশনে এই প্রথম আগুন লাগল। স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানদারেরা জানালেন, বছর দুয়েক আগেও অগ্নিকাণ্ডে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু তাতে স্থানীয় প্রশাসন বা রেল কর্তৃপক্ষ কারওরই টনক নড়েনি। এ দিন আগুন লাগার পরে খাবারের দোকানের কয়েকটি সিলিন্ডারও সশব্দে ফাটে বলে জানা গিয়েছে। তাতে কেউ হতাহতও হতে পারতেন। মহেশতলা পুরসভার ন’নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি তাপস হালদার বলছেন, ‘‘খবর পেয়েই পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছি। প্রশাসন দোকানদারদের পাশে আছে।’’
পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম বা লাগোয়া তল্লাটের দোকানদারেরা অনেকেই জবরদখলদার। এত গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে দোকান বসানোটা বিপজ্জনক। রেলের একার পক্ষে দোকান তোলা অসম্ভব। ফলে বিপদ ঘটছে।’’ এ দিন ন’টা ইঞ্জিন আগুন আয়ত্তে আনলেও স্টেশন চত্বরে আগুন মোকাবিলার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘আগুনের খবর পেয়েই যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। দমকল আগুন নেভানোর পরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।’’ রাত আটটার পরে ধীরে ধীরে ফের ট্রেন চলতে শুরু করে। তার আগে বালিগঞ্জ ও সন্তোষপুরের মধ্যে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে। অশেষ দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
দিনভর উপবাসক্লিষ্ট লোকজন তখন সবে ইফতারে বসতে চলেছেন। খাবার সাজিয়ে অনেকেই আজানের অপেক্ষা করছিলেন। ঠিক তখনই দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের পশ্চিম প্রান্তে (বজবজের দিক) আগুন লাগে। ওই দিকটায় ঘিঞ্জি বাজার। জামাকাপড়, জুতো, ঘর-গেরস্থালির প্লাস্টিক সামগ্রী, মনোহারি দোকানের পাশাপাশি খাবারের দোকানও রয়েছে। আগুনের শিখা এক সময়ে প্ল্যাটফর্মের ছাউনি ছুঁয়ে ফেলে।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ঝলসে গিয়েছে গাছের পাতা। আখতার আলি, সুরজ লস্কর, শেখ জাহাঙ্গিরেরা বলছেন, অনেক টাকার লোকসান। চা-ঘুগনির দোকানি গীতা চৌধুরীর চোখেমুখে আতঙ্ক। স্বামী শম্ভু ওই সময়ে অন্যত্র ছিলেন। দোকানে একাই ছিলেন গীতা। ঠিক কী ভাবে, কোন দোকান থেকে আগুন ছড়াল, স্পষ্ট হয়নি। কিন্তু পর পর অগ্নিকাণ্ড থেকে প্রশাসনের শিক্ষা নেওয়ার অনীহার ছবিটা ফের স্পষ্ট বলেই স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন।