বিপত্তি: দুই জেলার সংযোগরক্ষাকারী সেতু ভেঙে আপাতত সমস্যায় পড়েছেন বহু মানুষ। নিজস্ব চিত্র।
পিঁপড়েখালি নদীর উপরে সেতু ভেঙে আপাতত বাসন্তীর চড়াবিদ্যা ও সন্দেশখালির রামপুরের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, চাষিরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, কেন ভাঙল সেতু।
আগে উত্তর ও দক্ষিণ পরগনার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা হত পিঁপড়েখালি নদীর উপরে বাঁশের সাঁকো দিয়ে। ১৯৮২ সালে সুভাষ নস্কর বাসন্তীর বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পরে সেখানে একটি কাঠের সাঁকো তৈরি করেন। কিন্তু নোনা জলে কাঠের সাঁকো দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। মাঝে মধ্যেই সংস্কার করতে হত। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে কাঠের সাঁকোর পরিবর্তে স্থায়ী সেতুর দাবি জানান সুভাষ। সেই দাবি মেনে পিঁপড়েখালি নদীর উপরে তৈরি হয় ইস্পাতের কাঠামোর সেতু। সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের আর্থিক সহায়তায় প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মিত হয় সেচ দফতরের তত্ত্বাবধানে। সেতু নির্মাণের ফলে দুই জেলার মধ্যে যোগাযোগ মসৃণ হয়।
বাসন্তীর চড়াবিদ্যা, সরবেড়িয়া, আঠেরোবাঁকি, আমঝাড়া-সহ ক্যানিং ২ ব্লকের মঠেরদিঘি, কালিকাতলা এলাকার চাষিরা নিজেদের উৎপাদিত মাছ, আনাজ নিয়ে সন্দেশখালির রামপুর বাজারে বিক্রির জন্য যেতে শুরু করেন সেতু পেরিয়ে।
সন্দেশখালির জেলিয়াখালি, রামপুর সহ আশপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ সেতু পেরিয়ে বাসন্তী হয়ে ক্যানিংয়ে আসেন ট্রেন ধরতে ও অন্যান্য প্রয়োজনে। সেতু ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সকলেই।
শনিবার সকাল থেকে অবশ্য নৌকোয় করে শুরু হয়েছে পারাপার। কিন্তু দু’পারে যথাযথ জেটি না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।
সেচ দফতরের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, আপাতত পাশেই একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হবে। আর এখানেই নতুন কংক্রিটের স্থায়ী সেতু তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিক ভাবে প্রায় ৭ কোটি টাকা লাগতে পারে বলে অনুমান সেচ দফতরের আধিকারিকদের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরেই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। লোহার কাঠামো হওয়ায় বহু জায়গাতেই মরচে ধরে গিয়েছিল। বার বার সেচ দফতরকে সে বিষয়ে জানালেও গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার করা হয়নি। বছর দু’য়েক আগে নামমাত্র সংস্কার করা হলেও সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বিশেষ নজর না দেওয়ার কারণেই এই বিপত্তি ঘটেছে বলে অভিযোগ।
দুর্ঘটনার সময়ে দু’তিনজন সেতুর উপরে ছিলেন। তাঁরা জলমগ্ন হয়ে পড়লেও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে তাঁদের সকলকেই উদ্ধার করা গিয়েছে। বাসন্তী পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ পতিত হাজারি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাই। স্থানীয়দের সাহায্যে মানুষজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। সকাল থেকে দুই পাড়ের মধ্যে নৌকো চলাচলেরও ব্যবস্থা করেছি।”
অন্য দিকে, সেতু ভাঙার খবর পেয়ে শনিবার সকালেই ৯ নম্বর কুমড়োখালি গ্রামে পৌঁছে যান প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর। মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। সুভাষ বলেন, ‘‘বিধায়ক থাকাকালীন এই সেতু তৈরির যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সঠিক ভাবে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার কারণেই বিপত্তি ঘটল।”
শনিবার সকালে সেচ দফতরের আধিকারিকেরাও আসেন সেতুর অবস্থা পরিদর্শন করতে। জয়নগর ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কিংশুক মণ্ডল বলেন, ‘‘একটি অস্থায়ী সাঁকো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে এখানে নতুন স্থায়ী সেতু তৈরির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’