জোড়াতালি: রাস্তার একপাশ কেটে উঁচু করা হয়েছে অন্য পাশ।নিজস্ব চিত্র
দৃশ্য ১: পিচের রাস্তার মাঝে রাস্তা কেটে সেই মাটি ফেলে তৈরি করা হয়েছে বাঁধ। ফলে রাস্তা দিয়ে একটি সাইকেলও যেতে পারছে না। আমপানের পর থেকে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিশপুর পঞ্চায়েতের ধরমবেড়িয়া শিব মন্দির থেকে দুর্গাপুর স্লুইস গেট পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তার এমনই দশা।
দৃশ্য ২: ডাঁসা নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছিল। তাই বিশপুর পঞ্চায়েতের পশ্চিম খেজুরবেড়িয়া এফপি স্কুলের সামনে থেকে রূপমারি বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তার উপরেই মাটি ফেলে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। সেখানেও রাস্তার অবস্থা খারাপ।
আমপানে সব মিলিয়ে বিশপুর পঞ্চায়েতের বিভিন্ন রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তার উপরে তাঁবু করে রয়েছেন ফলে রাস্তাগুলি আরও সরু হয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, আমপানের রাতে ধরমবেড়িয়া থেকে দুর্গাপুর রাস্তার পাশের বিভিন্ন জমির মালিকেরা মাটি কাটতে দিতে না চাওয়ায় বাধ্য হয়ে এমন ভাবে রাস্তার উপরে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। রাস্তার উল্টো দিকের গ্রামগুলিকে প্লাবিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতেই এমন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা তপন মণ্ডল, দীনেশ মণ্ডলরা বলেন, ‘‘খলিসাখালি ও দূর্গাপুর গ্রামের মানুষদের এখন বহু পথ ঘুরে এই পিচের রাস্তা এড়িয়ে খারাপ ইঁটের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ফলে খুব সমস্যা হচ্ছে। জানি না কবে ঠিক হবে রাস্তা।”
হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দারা জানান, একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা কাটায় কাদা ঠেলে হেঁটে যেতে সমস্যা হয়। মাটি কিছুটা শুকিয়ে গেলে তখন সাইকেল নিয়ে যাওয়া যায়। তবে বাইক বা অন্য গাড়ি চলা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। ফলে অনেক পথ ঘুরে ভিতরের রাস্তা দিয়েই প্রয়োজনীয় সরকারি গাড়ি বা বেসরকারি ত্রাণের গাড়ি রূপমারি যাচ্ছে। বাইলানি-রূপমারি রোড ধরে যাওয়া যাচ্ছে না। তাই রূপমারিতে জলপথে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছচ্ছে।
রূপমারি বাজার থেকে খুলনার দিকে যেতে দক্ষিণ রূপমারিতে একটি নতুন ঢালাই রাস্তার মাঝখানে প্রায় ৬ ফুট অংশ জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে। যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য একটি বাঁশের পাটাতন তৈরি করা হয়েছে, যার উপর দিয়ে সকলে হেঁটে যাতায়াত করছেন। কিন্তু জোয়ার এলে এই রাস্তার বড় অংশ জলের তলায় ডুবে যাচ্ছে। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরছে।
হলদা চত্বরেও পিচের রাস্তা জলের তলায় ডুবে ছিল। এই রাস্তার পিচ পাথর উঠে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। ইট, পিচ ও ঢালাই রাস্তা মিলিয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রূপমারি পঞ্চায়েত এলাকায়।
হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি পঞ্চায়েতের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার নদী বাঁধের রাস্তা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এই পঞ্চায়েতের ছোট সাহেবখালির মত গ্রামগুলিতে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছনোর জন্য এখন নৌকোই সম্বল।
হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, “যত রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই দ্রুত রাস্তা মেরামতি হবে।’’
সন্দেশখালি ১ ব্লকেও রাস্তারও ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, “ন্যাজাট ১ ও ২ পঞ্চায়েতের সব রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত। সব মিলিয়ে গোটা ব্লকে ৩০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” এত বড় বিপর্যয়ের পরে কবে রাস্তা ঠিক হবে, সে দিকেই তাকিয়ে সুন্দরবনবাসী।