Thakurnagar

দু’টি প্রাণ চলে যাওয়ার পরে রেলগেট, আন্ডারপাসের দাবি 

দুর্ঘটনার পরে এলাকার মানুষ ঘটনাস্থলের কাছে রেলগেট ও আন্ডার বাইপাস তৈরির দাবি তুলেছেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র 

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ০০:১৪
Share:

তিন-বন্ধু: বাঁ দিক থেকে জয়, অতনু, শুভজিৎ।

ট্রেনের ধাক্কায় দুই তরুণের মৃত্যু হয়েছে বুধবার সন্ধ্যায়। জখম তাঁদের এক বন্ধু। মৃতের পরিবার এবং এলাকার মানুষ দাবি তুললেন, ঘটনাস্থলে আন্ডার বাইপাস এবং রেলগেট তৈরি করতে হবে।

Advertisement

বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছিল বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার ঠাকুরনগর স্টেশনের কাছে, মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ির উল্টো দিকে। ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় অতনু বিশ্বাস (১৮) এবং শুভজিৎ পালের (১৯)। গুরুতর জখম হয়েছেন তাঁদের বন্ধু জয় দে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর। রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জয় এখন কিছুটা সুস্থ।

তিনজনেই ঠাকুরনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। এ বছর সকলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পরিচিতেরা জানালেন, তিনজন অভিন্ন-হৃদয় বন্ধু। এক সঙ্গে স্কুলে যাতায়াত করতেন। গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যেতেন। আড্ডা দিতেন। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভজিৎ ভাল নাটক করতেন। স্কুলের অনুষ্ঠানে শুভজিৎ ও জয় এক সঙ্গে অভিনয় করেছেন। এনসিসিও করতেন সকলে। সাংস্কৃতিক মনস্ক দুই তরুণের মৃত্যু এবং তাঁদের বন্ধুর সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় শোকগ্রস্ত বহু মানুষ।

Advertisement

তিনজনের কেউই রেলপাড়ের বাসিন্দা নন। অতনুর বাড়ি উত্তর শিমুলপুরে। শুভজিতের বাড়ি শিমুলপুর চৌরঙ্গী এলাকায়। জয় পাতলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। কেন তাঁরা বুধবার সন্ধ্যায় রেললাইনের কাছে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে ধন্দে সকলেই। কেউই ওই এলাকায় নিয়মিত যেতেন না বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।

রেল পুলিশ জানতে পেরেছে, কানে হেডফোন লাগিয়ে অতনু এবং শুভজিৎ মোবাইলে গেম খেলছিলেন রেললাইনের পাশে বসে। জয় একটু তফাতে ছিলেন। তিনিই ট্রেন আসছে দেখতে পান। শেষ মুহূর্তে চিৎকার করে বন্ধুদের সতর্কও করেন। হাত ধরে টান দেওয়ার চেষ্টাও করেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন সকলে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক অতনু ও শুভজিৎকে মৃত বলে জানিয়ে দেন।

দুই ভাইবোনের মধ্যে অতনু বড়। বাবা অনিমেষ কেরলে শ্রমিকের কাজ করেন। অতনুর জ্যাঠা রিপন বলেন, ‘‘ওর বাবা ছেলেকে খুবই কষ্ট করে পড়াশোনা শেখাচ্ছিল। ছেলে ভবিষ্যতে চাকরি করবে, এই তার স্বপ্ন। সব শেষ হয়ে গেল। আমরা চাই, রেল কর্তৃপক্ষ পরিবারের কাউকে চাকরি দিক।’’ শুভজিতের আত্মীয় শান্তিরঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘রেল কর্তৃপক্ষ যদি আগে ওই এলাকায় সুরক্ষার ব্যবস্থা করত, তা হলে অকালে শুভজিৎকে হারাতে হত না।’’

দুর্ঘটনার পরে এলাকার মানুষ ঘটনাস্থলের কাছে রেলগেট ও আন্ডার বাইপাস তৈরির দাবি তুলেছেন। রিপন বলেন, ‘‘ওই এলাকায় রেললাইনের কাছে কোনও ব্যারিকেডও নেই। যদি ওখানে আন্ডার বাইপাস ও রেলগেট করা যায়, তা হলে দুর্ঘটনা কমানো যাবে। আগেও ওই এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ বৃহস্পতিবার বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে মৃতদের পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়েছেন বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ। তিনি রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ওই এলাকায় আন্ডারপাস, রেলগেট ও অ্যালার্মের দাবি করেছেন। গোপাল বলেন, ‘‘রোজ হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন রেলগেট পেরিয়ে। মতুয়া ধর্ম মহামেলার সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ ওখান দিয়ে যাতায়াত করেন। যে কোনও সময়ে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। রেলগেট বা আন্ডার বাইপাস করা খুবই দরকার।’’ গোপালের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ওই এলাকায় রেলগেট তৈরির পদক্ষেপ করা হয়েছিল। তারপরে রেল আর নজর দেয়নি।’’ বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘ওই এলাকায় রেলগেট হওয়া জরুরি। আমি আগেই কয়েকবার রেলের কাছে আবেদন করেছি। আবারও করব।’’

দুর্ঘটনার পরেও অবশ্য মানুষের হুঁশ ফেরেনি। শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, রেললাইনের পাশে মানুষ বালতিতে জল নিয়ে স্নান করছেন। জামাকাপড়, জুতো রোদে শুকোতে দেওয়া হয়েছে। রেললাইন পেরিয়ে যাতায়াত করছেন অনেকেই।

মাথায় করে মালপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। বললেন, ‘‘অন্য পথ না থাকায় রেললাইনের উপর দিয়েই যাতায়াত করতে আমরা বাধ্য হই।’’ সাইকেল ঠেলে লাইন পার হওয়ার সময়ে এক মহিলা বললেন, ‘‘স্টেশন দিয়ে ঘুরে যেতে অনেক সময় লাগে।’’ বৃহস্পতিবার দুপুরে বনগাঁ-শিয়ালদহ এবং বনগাঁ-রানাঘাট শাখায় রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, লাইনের পাড়ে যাঁদের ঘরবাড়ি, তাঁরা অনেকেই লাইনের পাশে কাজকর্ম করছেন। শিশুরা রেললাইন বরাবর ছোটাছুটি করছে। ট্রেন আসার সময়ে তাঁরা নিরাপদ দূরত্বে সরে যান বলে জানালেন অনেকেই।

এলাকাটি নির্জন। স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকে জানালেন, সন্ধে নামলে বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ে। নেশা করে অনেকে। এক যুবকের কথায়, ‘‘বাইরের ছেলেদের চলে যেতে বললে হুমকি দেয়। ঝামেলা করে। রাতে বাড়িতে ইটপাটকেলও ছুড়েছে।’’ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, লাইনের পাশে মদের বোতল, প্লাস্টিকের গ্লাস, খাবাবের প্যাকেট পড়ে আছে। বাসিন্দারা জানালেন, পুলিশ মাঝে মধ্যে টহলে আসে। তবে সন্ধ্যার পরে পুলিশ নিয়মিত নজরদারি চালাক, চাইছেন স্থানীয় মানুষ।

পুলিশ জানিয়েছে নিয়মিত তল্লাশি চলে। মানুষকে সচেতন করতে কর্মসূচি করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement