দুর্দশা: এখনও এই অবস্থায় বহু মানুষ। নিজস্ব চিত্র
বকখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে মিনিট পাঁচেক দূরে অমরাবতী ইন্দিরা কলোনি। পাশে লক্ষ্মীপুর জ্যোতি কলোনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বুলবুলে বিধ্বস্ত দুই কলোনিতে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল সেখানে এল শুক্রবার। আর তাতেই বদলে গেল এলাকার পরিস্থিতি। বিধ্বস্ত গ্রামে রাতারাতি ত্রাণ শিবির খুলে শুরু হল রান্নার কাজ। বসানো হল অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এত দিন সরকারি লোকজনকে দেখা না গেলেও কেন্দ্রীয় দল আসছে দেখেই এই আয়োজন। এ দিন খোলা মাঠে ত্রিপল খাটিয়ে রান্নাবান্না চলছিল। সেখানে লোকজনও জড়ো হয়েছিলেন। তৃণমূল নেতাদের চোখে পড়ল তদারক করছেন। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরাও দেখলেন সেই দৃশ্য। যদিও বিজেপি নেতা রামকৃষ্ণ পাত্র, পূর্ণচন্দ্র কুঁতিদের অভিযোগ, ‘‘এত দিন ধরে মানুষগুলো বিপদে পড়ে আছেন, দেখার লোক কেউ ছিল না। কেন্দ্রের প্রতিদিন দল আসবে শুনে সঙ্গে সঙ্গে শিবির খুলে গেল!’’ কেন্দ্রীয় দলের সামনে অবশ্য এ সব নিয়ে মুখ খোলেননি গ্রামের মানুষ। তবে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।
গ্রামবাসী এবং বিরোধীদের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন শাসক দলের নেতারা। তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য তথা নামখানার তৃণমূল নেতা শ্রীমন্ত মালির দাবি, ‘‘দুর্যোগের পর থেকেই শিবির চলছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মিথ্যা বলছে বিজেপি।’’ তবে গ্রামে কান পাতলে শোনা আসছে নানা অভিযোগের কথা। সরকারি ভাবে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা যে এত দিন হয়নি, সে কথা জানাচ্ছেন অনেকেই। গ্রামে চিকিৎসক দলকেও শুক্রবারের আগে তাঁরা দেখেননি বলেই জানালেন।
অমরাবতী গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, কামিনী দাসের বাড়ির মাটির দেওয়াল ধসেছে। আশপাশে বকুল দাস, মামনি দাস, বিল্বপদ সামন্ত, নিতাই সামন্তদের বাড়িও ভেঙেছে। সকলেই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ কোনও মতে ত্রিপল ঢাকা দিয়ে রাত কাটাচ্ছেন। কামিনীরা ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা সব হারিয়েছি। দুই ছোট সন্তানকে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছি। স্বামী-স্ত্রী অন্যের বাড়িতে বসবাস করছি। প্রশাসন আমাদের দেখতে পায় না। আজ পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য পাইনি। প্রায় অনাহারে দিন কাটছে আমাদের।’’
একটু এগিয়ে বিজয়বাটী গ্রাম। পুরো গ্রামেরই বিধ্বস্ত অবস্থা। প্রায় অধিকাংশ বাড়ি মাটিতে মিশে গিয়েছে। এখনও কোনও সরকারি ত্রাণ পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। গ্রামের বাসিন্দা সামাদ শেখ, আনোয়ার আলি, সিরাজ আলিরা জানালেন, বাড়ি-ঘর সব নষ্ট। মাটির উপরে কোনও মতে ছেঁড়া ত্রিপল ঢাকা দিয়ে প্রায় অনাহারে দিন কাটছে। পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের দেখা নেই।
তবে এ দিন বিকেলে ওই গ্রামে সংবাদমাধ্যম ঢুকেছে জেনে তড়িঘড়ি চলে আসেন নামখানার বিডিও রাজীব আহমেদ। তিনি গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। পরে তাঁদের আশ্বস্ত করে জানান, দ্রুত ত্রাণ শিবির খোলা হবে। কোথায় ত্রাণ শিবির হবে, তা নিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বিডিও বলেন, ‘‘সব গ্রামে ধীরে ধীরে ত্রাণ শিবির খোলা হচ্ছে। শিবিরের খাবার থেকে কেউ যেন বাদ না পড়েন, সে সব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’