দুশ্চিন্তার-মেঘ: ক্যানিংয়ের মাতলা নদীর পাড়ে। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন প্রসেনজিৎ সাহা
বার বার ঝড়ের পূর্বাভাস। প্রশাসনের সতর্কবার্তা। বাড়ি-ঘর ছেড়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া। ক্ষয়ক্ষতির দাগ বুকে ধরে ফের বাঁচার লড়াই। সুন্দরবনের মানুষ এই জীবনযাত্রাকে যেন নিজেদের ভবিতব্য বলেই ধরে নিয়েছেন।
আয়লার স্মৃতি এখনও টাটকা। এগারো বছরের পুরনো ক্ষত এখনও পুরোপুরি শুকোয়নি উপকূলবর্তী মানুষের জীবন থেকে। ফের আমপানের আতঙ্কে তাই বুক দুরুদুরু সকলের।
২০০৯ সালের ২৫ মে আছড়ে পড়েছিল আয়লা। সকাল থেকেই সে দিন মুখ ভার ছিল আকাশের। দুপুর হতেই শুরু হয় ঝিরঝিরে বৃষ্টি। দমকা হাওয়ার দাপট বাড়তে থাকে ক্রমশ। একটা সময়ে শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডব। উল্টে পড়ে বহু গাছ। নদীর জল ফুলে উঠে সন্দেশখালির দু’টি ব্লক, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জের বহু গ্রামকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বহু ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি ঘটিয়েছিল আয়লা। পরে বুলবুল আর ফণীর রূপও দেখেছে সুন্দরবন। এ বার আমপান কোন রুদ্র রূপ ধারণ করে ধেয়ে আসে। তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে উপকূলবর্তী এলাকার বহু মানুষের।
বুধবার বিকেল নাগাদ সুন্দরবন এলাকায় আছড়ে পড়ার কথা সুপার সাইক্লোন আমপানের। প্রশাসনের তৎপরতায় ফ্লাড সেন্টারে যেতে ব্যস্ত নদীপাড়ের মানুষ। সন্দেশখালির কোড়াকাটি গ্রামের বাসিন্দা কুম্ভকর্ণ সর্দার ও তাঁর স্ত্রী শঙ্করী এখনও ঘর আগলে বসে ভাবছেন পুরনো সেই দিনের কথা। আয়লার তাণ্ডবে সে বার তছনছ হয়ে গিয়েছিল তাঁদের জীবন।
মাইলের পর মাইল নদী বাঁধ ভেঙেছিল আয়লার দাপটে। নোনা জলে ভরেছিল চাষের জমি। মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল বসতভিটে। গ্রামে গ্রামে জড়ো হয়েছিল মৃত জীবজন্তুর দেহ। একটা গাছও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল না এলাকায়। সরকারি, বেসরকারি ত্রাণের ভরসায় দিনের পর দিন কেটেছে। কাজকর্ম সব শিকেয় উঠেছিল দীর্ঘ দিন পর্যন্ত। পরে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটা শুরু করেন মানুষ। হারিয়ে যাওয়া ঘর গেরস্থালি, চাষের জমি, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, পানীয় জল, পুকুরের মাছ সব ফিরে পাওয়ার লড়াই ছিল সেটা। কাজের সন্ধানে বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেন। আয়লার প্রত্যক্ষদর্শী মণিপুরের বাসিন্দা সুনীল পড়ুয়া, দুলাল মাইতি বলেন, ‘‘সে বার সন্দেশখালিতে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর মধ্যে ২৩ জন ছিলেন আতাপুর, কোড়াকাটি এবং মণিপুরের বাসিন্দা। পরিবারগুললো যখন ফের একটু থিতু হয়েছে, তখনও স্বস্তি নেই। একের পর এক ধাক্কা। করোনার জন্য কাজকর্ম গিয়েছে। এখন আবার আমপানের আক্রমণ।’’ ‘‘বেঁচে থাকতে আর কত লড়াই করতে হবে বলুন তো’’— প্রশ্নের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে উত্তর।সেচ দফতরের বসিরহাট ডিভিশনের অধীনে থাকা সাড়ে ৮শো কিলোমিটার নদী বাঁধ আছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১১ কিলোমিটার আয়লা বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। আরও ১১ কিলোমিটার আয়লা বাঁধের কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু হয়েছে। এলাকায় আরও কিছু দুর্বল নদীবাঁধ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সারাইয়ের কাজ চালাচ্ছে সেচ দফতর।