প্রতীকী ছবি
গ্রামে চোলাই তৈরি করে গ্রামেই তা রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছিল। বনগাঁ থানার মুড়িঘাটা এলাকার ঘটনা। চোলাইয়ের নেশায় এলাকায় ভিড়ও করছিলেন বাইরের মানুষ। চোলাই বিক্রিও হচ্ছিল চড়া দামে।
এই সব খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে বনগাঁ থানার পুলিশ মুড়িঘাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভেঙে দেয় পাঁচটি চোলাই তৈরির ভাটি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চোলাইয়ের ভাটি ভেঙে ফেলার সময়ে এলাকার মহিলারা পুলিশকে ঘিরে ধরে জানান, চোলাইয়ের কারবার না চললে তাঁরা না খেয়ে মরবেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, গ্রামের আদিবাসী ও গরিব মানুষের বেশির ভাগই খেতমজুরি বা দিনমজুরি করে রোজগার করেন। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁদের কাজকর্ম সব বন্ধ। রোজগার বন্ধ। ঠিকমতো খাওয়াও জুটছিল না। গ্রামবাসীদের দাবি, পেট চালাতে একরকম বাধ্য হয়েই তাঁরা চোলাই ও দেশি মদের কারবার শুরু করেছেন।
সব শুনে পুলিশ তাঁদের আশ্বাস দেয়, চোলাইয়ের কারবার বন্ধ করলে পুলিশই তাঁদের খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করবে। গ্রামবাসীরা কথা দেন, খাবার পেলে তাঁরাও চোলাইয়ের কারবার বন্ধ করে দেবেন।
প্রতিশ্রুতি মতো বনগাঁ থানার পুলিশ রবিবার দুপুরে খাদ্যসামগ্রী গ্রামে নিয়ে গিয়ে তা বিলি করে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ১৪০টি পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। পরিবার পিছু দেওয়া হয় ৫ কেজি চাল, আড়াই কেজি আলু, ৫০০ গ্রাম সর্ষের তেল, ৫০০ গ্রাম ডাল, আনাজ ও বিস্কুট। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষাবিধি মেনেই খাদ্যসামগ্রী বিলি করা হয়।
যাঁদের বাড়ির চোলাইয়ের ভাটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদেরও এ দিন ডেকে এনে ত্রাণ দেয় পুলিশ। তাঁদের বুঝিয়ে বলাও হয়, তাঁরা যেন আর চোলাই তৈরি না করেন।
বনগাঁ থানার আইসি মানস চৌধুরী বলেন, ‘‘গ্রামবাসীকে বলা হয়েছে, খাদ্যসামগ্রী ফুরিয়ে গেলে আবার দেওয়া হবে। তবে কোনও ভাবেই গ্রামে চোলাই কারবার চলতে দেওয়া হবে না। এর পরেও কেউ চোলাই তৈরি বা বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
কয়েক বছর আগেও মুড়িঘাটা গ্রামে চোলাইয়ের রমরমা কারবার ছিল। ঘরে ঘরে চোলাই তৈরি হত। গ্রামবাসীরা চোলাইয়ের নেশায় আসক্ত ছিলেন। বনগাঁর প্রাক্তন এসডিপিও অনিল রায় সে সময়ে পদক্ষেপ করে চোলাই তৈরি ও বিক্রি বন্ধ করেছিলেন। তিনি পুলিশি অভিযানের পাশাপাশি গ্রামবাসীকে সচেতন করতেও লাগাতার প্রচার ও কর্মশালা করতেন। সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট মানুষদের নিয়ে সেই সব কর্মশালা আয়োজিত হত।
অনেকদিন নিয়ন্ত্রণে থাকার পরে এ বার লকডাউনের সময়ে ফের শুরু হয় চোলাই কারবার। বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ ওই এলাকায় নিজের উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী আগেই বিলি করেছেন। গোপালও বলেন, ‘‘চোলাইয়ের কারবার বন্ধ করলে আমি আবার ওদের খাদ্যসামগ্রী দিয়ে আসব। ওদের খাবারের অভাব হবে না।’’
গ্রামবাসী কথা দিয়েছেন খাবারের অভাব না থাকলে তাঁরাও আর চোলাই বিক্রি করবেন না।